নিজস্ব প্রতিনিধি: ভাবনাটা প্রথম আসে কলকাতার কিছু দৈনিকের সাংবাদিকের মাথায়। সময়টা ১৯৭৭। তখন সবেমাত্র বছরদুয়েক হয়েছে টেলিমিডিয়া অর্থাৎ দূরদর্শন এসেছে শহরে। শ্রুতিমাধ্যম তথা রেডিও তো আছেই। আছে শহরের সংবাদপত্রগুলোও। সব মাধ্যমের সব ধরনের সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা হল। এই ভাবনা মাথায় আসার আরও একটা বড়ো কারণ, সে সময়ে কলকাতা শহরে সাংবাদিকদের যে ক্লাবটি ছিল, তাতে সব ধরনের সাংবাদিকের সদস্যপদ পাওয়ার অধিকার ছিল না। আজও নেই।
তার পর ১৯৭৮-এর আগস্টে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হল এই সংগঠন। জন্ম হল ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের। দেখতে দেখতে ৪৫ বছরটা পেরিয়ে গেল। কলকাতার সাংবাদিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাব ৪৫ বছর পূর্ণ করল। এই উপলক্ষ্যে বুধবার রবীন্দ্র সদনে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আসন গ্রহণ করেন তরুণ বিজ্ঞানী-গবেষক ড. সায়ন্তন ভাদুড়ি।
এ দিন ছিল রাখিবন্ধন উৎসব। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে উপস্থিত সকলকে রাখি পরানো হয়। তার পর প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এর পর অতিথিবরণের পালা। এ দিনের বিশেষ অতিথি সায়ন্তন ভাদুড়িকে বরণ করে নেন ক্লাব সভাপতি প্রান্তিক সেন ও সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন।
স্বাগত ভাষণে ক্লাবের সভাপতি প্রান্তিক সেন ক্লাব গোড়াপত্তনের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করে সংগঠনের বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মের কথা ব্যক্ত করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ক্লাব আয়োজিত বিভিন্ন বাৎসরিক অনুষ্ঠানের কথা। এর মধ্যে রয়েছে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। ক্লাব আয়োজিত বাৎসরিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী যে এই মহানগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট সে কথা বুঝিয়ে বলেন প্রান্তিকবাবু।
ক্লাবের মুখপত্র ‘সাংবাদিক’ প্রকাশেরও প্রসঙ্গ তোলেন প্রান্তিকবাবু। তিনি জানান, বছরে তিনবার প্রকাশিত হওয়া এই সাময়িকপত্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবের আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লাইব্রেরি। প্রান্তিকবাবু জানান, ওই লাইব্রেরিতে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন সংক্রান্ত হাজারতিনেক বই রয়েছে। এগুলি যথাযথ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী-গবেষক ড. সায়ন্তন ভাদুড়ি তাঁর ভাষণে তাঁর স্কুলজীবনের প্রসঙ্গ তোলেন। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সায়ন্তন নিজের স্কুলজীবন থেকে কী শিক্ষা পেয়েছিলেন, তা জানান উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলীকে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। সায়ন্তন বলেন, আট বছর তাঁর স্কুলজীবন। এখানে তিনি শিখেছেন কী ভাবে স্বয়ম্ভর ও শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল সকলের সঙ্গে সব কিছু ভাগ করে নেওয়া। নিজেদের সন্তানদের এ ভাবেই গড়ে তুলতে উপস্থিত অভিভাবকদের অনুরোধ করেন সায়ন্তন।
বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্লাবের যে সব সদস্য সক্রিয় থাকেন তাঁদের নামোল্লেখ করে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সাধারণ সম্পাদক ইমন কল্যাণ সেন। ক্লাবের বিভিন্ন উদ্যোগে যে সব সংস্থা এবং ব্যক্তিবিশেষ নানা ভাবে পাশে থাকেন তাঁদের ধন্যবাদ জানান ইমনবাবু। বিশিষ্ট অতিথি, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এ দিন অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহ-সভাপতি পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী ও নরেশ মণ্ডল, কোষাধ্যক্ষ সাধনা দাস বসু এবং দুই সহকারী সম্পাদক সঞ্জয় হাজরা ও অভিজিৎ ভট্টাচার্য। এ দিন ক্লাবের মুখপত্র ‘সাংবাদিক’-এর ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।
পুরস্কার প্রদান
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী শ্রেয়া মণ্ডলকে দেওয়া হয় সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার। ড. স্মরজিৎ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার পান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী অনিকেত দত্ত। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী সায়নী দাসকে নিরঞ্জন সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী বর্ণালী কুণ্ডুকে দেওয়া হয় বরুণ সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতায় প্রথম স্থানাধিকারী রোহিণী রায়চৌধুরীকে রাহুল গোস্বামী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য রমেন্দ্রলাল রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় দক্ষিণারঞ্জন বসু স্মৃতি পুরস্কার। অমিত চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হল উদীয়মান অ্যাথলিট মোহর মুখার্জিকে।
এ ছাড়াও যে সব ক্লাব সদস্যের ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনি উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় এ বছর ভালো ফল করেছে, তাদের দেওয়া হল ক্লাবের প্রয়াত প্রাক্তন সভাপতি হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার এবং যারা মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে, তাদের দেওয়া হল ক্লাবের প্রয়াত প্রাক্তন সদস্য অভীক বসুর নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার।
দ্বিতীয় পর্বে সমদীপ্তা
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সমদীপ্তা মুখার্জির সংগীত পরিবেশন। টানা প্রায় দু’ ঘণ্টা পুরোনো দিনের আধুনিক বাংলা গান, পুরোনো হিন্দি ফিল্মের গান, জগজিৎ সিংয়ের গজল, লোকসংগীত এবং রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মজিয়ে রাখেন সমদীপ্তা ও তাঁর সঙ্গতকারীরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করেন নন্দিনী লাহা।
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়