Home খবর কলকাতা প্রয়াত আজিজুল হক: থেমে গেল এক সংগ্রামী জীবনের পথচলা, নকশাল আন্দোলনের এক...

প্রয়াত আজিজুল হক: থেমে গেল এক সংগ্রামী জীবনের পথচলা, নকশাল আন্দোলনের এক জীবন্ত ইতিহাসের অবসান

নকশাল আন্দোলনের অন্যতম মুখ, প্রাবন্ধিক ও বামপন্থী চিন্তক আজিজুল হক প্রয়াত। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় সল্টলেকের হাসপাতালে মৃত্যু। তাঁর মৃত্যুতে অবসান হল এক সংগ্রামী যুগের।

azizul-haque-passes
প্রয়াত আজিজুল হক

এক সংগ্রামী জীবনের অবসান। দীর্ঘ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে থেমে গেল প্রাবন্ধিক, বক্তা এবং বামপন্থী চিন্তক আজিজুল হকের জীবন। আজ, সোমবার দুপুর ২:২৮ মিনিটে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে। একাধিক জটিলতা দেখা দেয়—রক্তে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, ভেন্টিলেশন সাপোর্টে দিন কেটেছে। শেষরক্ষা আর হল না।

নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন আজিজুল হক। চারু মজুমদারের মৃত্যুর পরে সিপিআই (এম-এল)-এর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লেখা ‘কারাগারে ১৮ বছর’ বইটি নকশাল আন্দোলনের রাজনৈতিক এবং মানবিক পরিপ্রেক্ষিতে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

তাঁর জীবনের বড় অংশ কেটেছে জেলে। বারবার গ্রেফতার, বারবার নির্যাতন। ১৯৭৭-এ মুক্তি পেলেও, ১৯৮২ সালে ফের গ্রেফতার হন। ১৯৮৬ সালে জেলের ভিতরে তাঁর উপর চালানো শারীরিক অত্যাচার ও কারাগারের করুণ অবস্থা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। বামফ্রন্ট সরকারের দুই মন্ত্রী দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও যতীন চক্রবর্তী, এমনকি কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখার্জি পর্যন্ত জেলে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে প্যারোলে মুক্তির সুপারিশ করেন।

রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে আনলেও, মুছে যায়নি তাঁর লড়াইয়ের ছাপ। প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি’। পাশাপাশি লিখে গিয়েছেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং ‘আজকাল’-এর পাতায়। জেল থেকেই গোপনে লিখে ফেলেন ‘কারাগারে ১৮ বছর’। সে বইয়ের পাণ্ডুলিপি পুলিশের হাতে যাওয়ার আগেই সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত এবং ‘আজকাল’-এর এক রিপোর্টারের উদ্যোগে তা জেল থেকে উদ্ধার করে প্রকাশ করা হয়।

সেই বইয়ে উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিবরণ—লাঠির আঘাতে ঘুম ভাঙানো, পচা খাবার, রাতে নিরন্তর মানসিক নিপীড়ন। সহবন্দী কমরেডদের মৃত্যু দেখতে দেখতেই তিনি ইতিহাসের পৃষ্ঠা লিখে গেছেন। এই বই তাঁর পক্ষ থেকে একটি নীরব দলিল—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানান দেবে কীভাবে রাষ্ট্র রাজনৈতিক ভিন্নমতকে দমন করেছিল।

আজিজুল হকের মৃত্যু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়। তাঁর প্রস্থান এক সংগ্রামী ভাবনার অবসান, যা আজকের রাজনীতিতে ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে। তবু, তাঁর লেখা, আদর্শ ও লড়াই বেঁচে থাকবে বইয়ের পাতায়, স্মৃতির গভীরে। তিনি ছিলেন, তাই আমরা ইতিহাসের কিছু অধ্যায় জানতে পেরেছি—একটা সময়, একটা আন্দোলন, একটা অসমাপ্ত স্বপ্ন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version