কলকাতা: সক্কালেই হয়ে গিয়েছে সন্ধিপূজা। অষ্টমী পেরিয়ে নবমী পড়ে গিয়েছে সেই সাতসকালেই। আগামীকাল শনিবার বিজয়াদশমী। দেখতে দেখতে পুজো পেরিয়ে যাচ্ছে। ঠাকুর দেখার সময় ক্রমশ কমে আসছে। তাই শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা মহানগরীর দুর্গাপূজা মণ্ডপগুলিতে প্রচণ্ড ভিড়। কিন্তু এদিন সন্ধ্যায় সেই ভিড়কেও ছাপিয়ে গেল ধর্মতলার ভিড়।
কিন্তু এখানে তো কোনো পুজো নেই। নেই আলোর রোশনাইও। তা ছাড়া এই অঞ্চল পার্ক স্ট্রিটও নয়। তাই মাত্রাতিরিক্ত আলোকমালার অত্যাচারও নেই। আছে রাতের স্বাভাবিক আলো। সেখানেই মঞ্চ করে বসে আছেন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের সেই অনশনমঞ্চের সামনে শুক্রবার সন্ধ্যায় জনজোয়ার, যা মহানগরীর যে কোনো বিখ্যাত পূজামণ্ডপকে হার মানাবে।
শুক্রবার বিকালে ধর্মতলায় জমায়েতের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর পক্ষ থেকে দেবাশিস হালদার শুক্রবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেই সম্মেলন থেকে তিনি নাগরিক সমাজকে অনুরোধ করেন তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি সংহতি জানিয়ে এগিয়ে আসতে। দেবাশিসের আবেদন, “আমাদের সহযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও সংকল্পের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়ান, আপনারা আমাদের শক্তি।”
সেই ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ দুপুর থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন ধর্মতলায়। পুজোর দিনগুলোয় শহরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ধর্মতলা অঞ্চলে ভিড় কম থাকে। কিন্তু এদিন ছবিটা ছিল অন্য। দুপুরের পর থেকেই ধর্মতলায় ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের কাছে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। একটা সময় অনশনমঞ্চের সামনের রাস্তা দিয়ে তথা মেট্রো হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের ভিড়ের কারণে কলকাতা পুলিশ কার্যত বাধ্য হয়েই ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
অনশনমঞ্চের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা। তবে ব্যারিকেডের বাইরের জায়গাটি ছিল সাধারণ মানুষের দখলে। সব বয়সের মানুষই জমা হয়েছিল সেখানে – তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্করা। এমনকি শিশুদেরও দেখা গেল সেখানে। বড়োদের হাত ধরে চলে এসেছে। অনেকেই রাস্তায় বসে ছবি আঁকছেন, কেউ বা স্লোগান লিখছেন, অনেকে স্লোগান দিচ্ছেনও, সম্মেলক গানও হচ্ছে। হাতে জাতীয় পতাকা থেকে শুরু করে পোস্টার পর্যন্ত। আর অসংখ্য ‘ফ্ল্যাশলাইটে’ আলো ম্লান হয়ে গিয়েছে রাস্তার আলো।
ডাক্তারদের ওই জমায়েতে শামিল হওয়ার জন্য রাজ্য বামফ্রন্টও সাধারণ মানুষের প্রতি আবেদন জানিয়েছিল। ফ্রন্টের তরফে বিবৃতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে শুক্রবার বিকালে ধর্মতলায় ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছিল কেউ যেন কোনোরকম সাংগঠনিক পতাকা নিয়ে না আসেন। সবাই যেন নাগরিক হিসাবেই কর্মসূচিতে যোগ দেন।