দীর্ঘ চার বছরের প্রতীক্ষার অবসান। কালীঘাট স্কাইওয়াক তৈরির জন্য উচ্ছেদ হওয়া রিফিউজি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অবশেষে পুনর্বাসন পেলেন। আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন মার্কেটের চাবি হাতে পেলেন ১৭৫ জন ব্যবসায়ী। কিন্তু স্বস্তির মাঝেও একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে—আগের মতো বেচাকেনা হবে তো?
কলকাতা পুরসভার প্রতিশ্রুতি ছিল ১৮ মাসের মধ্যেই নতুন মার্কেট তৈরি করে ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা গড়াল প্রায় চার বছর পর। অবশেষে বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দোকানের চাবি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায়।
নতুন মার্কেট, নতুন ভবিষ্যৎ?
কালীঘাট মন্দিরের কাছেই তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক এই হকার্স মার্কেট। প্রায় ১৫,০০০ বর্গফুটের বেশি এলাকা জুড়ে তৈরি পাঁচতলা ভবনটিতে রয়েছে আধুনিক পরিকাঠামো। একতলা ও দোতলায় পুরসভার অফিস এবং কিছু দোকান, তিন ও চারতলায় সম্পূর্ণ হকার্স মার্কেট, আর পাঁচতলায় থাকবে কলকাতা পুরসভার আলোক বিভাগের দফতর।
তবে নতুন জায়গা পেলেও অনেক ব্যবসায়ীই আশঙ্কায় ভুগছেন। তাঁদের বক্তব্য, কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দোকান থাকার ফলে প্রচুর ক্রেতার আনাগোনা ছিল। এখন এই নতুন মার্কেটে মানুষ আসবে তো? ব্যবসা কি আগের মতো হবে?
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা
এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “আগে রাস্তায় বসে ব্যবসা করতাম, তাই ভিড়ের অভাব হতো না। এখন মার্কেটের মধ্যে ঢুকে ক্রেতারা কেনাকাটা করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা পুরনো জায়গায় বসে ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। আমাদের সরিয়ে দেওয়া হলো, বলল নতুন মার্কেটে পাঠাবে। এখন যদি ক্রেতা না আসে, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?”
তবে অনেকেই আশাবাদী, নতুন মার্কেটের পরিকাঠামো আধুনিক হওয়ায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। কিন্তু সেটি জনপ্রিয় হতে কতদিন সময় লাগবে, তা নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন।
পুরসভার আশ্বাস
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন জায়গায় ব্যবসা জমাতে একটু সময় লাগবেই। তবে পুরসভা সব ধরনের সহায়তা করবে। ভালো মানের পণ্য এবং সঠিক দামে জিনিস বিক্রি করলে ক্রেতারা অবশ্যই আসবেন।”
পুরসভার এক আধিকারিকের মতে, “মন্দিরের ভক্তরা এবং অন্যান্য ক্রেতারা এখানে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করবেন। নতুন মার্কেটটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ক্রেতাদেরও সুবিধা হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি জমে উঠবে।”
তবে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা এখনও কাটেনি। তাঁদের আশা, পুরসভা যদি প্রচারের মাধ্যমে মার্কেটের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করে, তাহলে ক্রেতাদের আনাগোনাও বাড়বে। আপাতত প্রশ্ন একটাই—এই নতুন ঠিকানায় আগের মতো বেচাকেনা হবে তো?