কলকাতার মেট্রোর নীল লাইন (উত্তর-দক্ষিণ) বর্তমানে যাত্রীচাপে জেরবার। কবি সুভাষ টার্মিনাল হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যাত্রী পরিষেবার চাপ আরও তীব্র হয়েছে। শুক্রবার পরিস্থিতি বৃহস্পতিবারের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সমস্যার মূল কারণ এখনও অমীমাংসিত।
সমস্যার মূলে কী?
২৮ জুলাই কবি সুভাষ টার্মিনালের প্ল্যাটফর্মের পিলারে ফাটল ধরা পড়ায় জরুরি ভিত্তিতে স্টেশন বন্ধ করা হয়। এর পর থেকেই সমস্ত ট্রেন টালিগঞ্জ পর্যন্ত ছোট করা হচ্ছে। তবে রেক রিভার্সালের জন্য এখনও ট্রেনকে কবি সুভাষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা জন্য প্রতিটি ট্রেনে অন্তত পাঁচ মিনিট সময় নিচ্ছে। এর ফলে সময়সূচি ভেঙে পড়ছে।
যাত্রী ভিড় ও পরিষেবার চাপ
- বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত ভিড়ের ফলে ট্রেনের দরজা হাত দিয়ে বন্ধ করতে হয়েছিল। একটি ট্রেন যান্ত্রিক সমস্যা দেখায় সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে একাধিক পরিষেবা ব্যাহত হয়।
- শুক্রবারও ময়দান, কালীঘাট, শোভাবাজারের মতো ব্যস্ত স্টেশনে হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করতে দেখা গিয়েছে কর্মীদের। তবে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা হয়নি।
- আরপিএফ সূত্রে জানা গেছে, এদিনও অসংখ্য মানুষ কেনাকাটার ব্যাগ নিয়ে মেট্রোয় ওঠেন। স্পষ্ট, পুজোর আগে শপিং ভিড় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
কেন বাড়ছে এই চাপ?
- গত বছর মার্চে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর (সবুজ লাইন) ইসপ্ল্যানেড-হাওড়া ময়দান অংশ চালু হওয়ার পর থেকেই নীল লাইনের ইসপ্ল্যানেড স্টেশনে যাত্রী সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যায়।
- এ বছর সবুজ লাইনের পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা ও হলুদ লাইনের সূচনার ফলে যাত্রী সংখ্যা আরও বেড়েছে। উভয় লাইনই নীল লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত, ফলে চাপ বাড়ছে বহুগুণে।
- পুজোর আগে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়, যা চলতি সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
সমাধান কতটা সম্ভব?
মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী শনিবার রাত থেকে ব্রিজির শাহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে নতুন টার্মিনালের ট্র্যাক বসানো শুরু হবে। তবে পুরো ক্রসওভার তৈরি ও সময়সূচি স্বাভাবিক করতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
একজন আধিকারিক বলেন, “এখন পরিষেবার সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে গেলে নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
সামগ্রিক চিত্র
- পরিষেবার সংখ্যা: সোমবার থেকে নীল লাইনে আরও ২২টি নতুন পরিষেবা যোগ করা হয়েছে। মোট পরিষেবা সংখ্যা এখন ২৮৪।
- পুজোর আগে চাপ: প্রতিবছরই পুজোর এক মাস আগে সপ্তাহান্তে বিশেষ ট্রেন চালানো হয়। কিন্তু এ বছর পরিষেবার বাড়তি ঘোষণা হয়নি।
- সমস্যার সমাধান: অন্তত অক্টোবরের শুরুর আগে কাঠামোগত সমস্যার পূর্ণ সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
কলকাতার মেট্রো রেল নেটওয়ার্কে বর্তমানে নীল লাইন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ মাধ্যম। কিন্তু কবি সুভাষ টার্মিনাল বন্ধ থাকায় পুরো ব্যবস্থাই অগোছালো হয়ে উঠেছে। পুজোর আগে ভিড় বাড়তে থাকায় যাত্রীদের সমস্যাও বাড়বে। নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অনিশ্চয়তা কাটার সম্ভাবনা কম।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপের সম্ভাবনা, কলকাতায় ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস