কলকাতা পুরসভা বস্তি এলাকাকে ঠিকার আওতাভুক্ত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সম্প্রতি এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ আসছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আগুন লাগিয়ে জমি খালি করার চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে। এতে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে বস্তি এলাকার জমিকে ঠিকা জমিতে রূপান্তরিত করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বস্তিতে আগুন, মেয়রের হস্তক্ষেপ
বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার ভবানীপুরের পদ্মপুকুর অঞ্চলের চক্রবেড়িয়া লেনে একটি বস্তিতে আগুন লাগে। ঘটনাস্থলে পৌঁছান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে অভিযোগ করেন যে, বস্তি খালি করার উদ্দেশ্যে আগুন লাগানো হয়েছে। ওই ঘটনার পরই মেয়র এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার কথা জানান। তিনি বলেন, গরিব মানুষের যাতে ঘরছাড়া না হতে হয়, তা নিশ্চিত করতে বস্তির জমি ঠিকার আওতাভুক্ত করার ভাবনা রয়েছে। এতে বস্তিবাসীদের কেউ জোর করে উচ্ছেদ করতে পারবে না।
ঘরহারা বাসিন্দাদের পুনর্বাসন
আগুনে একাধিক ঘর পুড়ে গেলেও হতাহতের কোনও খবর নেই। তবে বেশ কয়েকটি পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়র আশ্বাস দেন, কলকাতা পুরসভা ঘরহারাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। পরে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি নিজেই বিষয়টি তুলে ধরেন।
ঠিকা জমি নিয়ে বিতর্ক
তবে বস্তি এলাকাকে ঠিকার আওতাভুক্ত করার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে পুর আধিকারিকদের মধ্যে। কলকাতার বেশিরভাগ বস্তি ঠিকা টেনান্সির জমিতেই অবস্থিত। তবে কিছু বস্তি ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে বহু বছর ধরে রয়েছে। এক পুর-আধিকারিকের মতে, ঠিকার একটি নির্দিষ্ট ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট রয়েছে। তাই এভাবে কোনও জমিকে ঠিকার আওতায় আনা খুব সহজ কাজ নয়।
আইনি জটিলতা
পুরকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, সরকার বিশেষ ক্ষমতাবলে বস্তির জমিকে ঠিকার আওতায় আনতে পারে। তবে আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। কিছু আধিকারিকের মতে, অনেক ক্ষেত্রে ঠিকা জমিও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। তাই আইনি দিক খতিয়ে দেখে মেয়রের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উচ্ছেদ রোধে নতুন পরিকল্পনা
মেয়রের এই সিদ্ধান্তে কলকাতার বস্তিবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে প্রশাসনিক দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঠিকা জমি আইন ও তার প্রক্রিয়াগত জটিলতা সামলাতে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হতে পারে।
বস্তি উচ্ছেদ রোধে এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে বস্তিবাসীদের নিরাপত্তা অনেকটাই সুনিশ্চিত হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের ওপর।