শহরের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন এখন আর শুধু প্রকৌশলের নয়, বরং তা রেস্তরাঁ ব্যবসারও মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে। ‘রুফটপ রেস্তরাঁ’ নামেই পরিচিত এই রেস্তরাঁগুলি শহরের স্টাইল স্টেটমেন্টে পরিণত হলেও, সাম্প্রতিক মেছুয়ার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রশাসনকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করল— ছাদ কি শুধুই সৌন্দর্য ও বিনোদনের জন্য?
পুরসভার কড়া নির্দেশে এখন শহরের সমস্ত রুফটপ রেস্তরাঁ আপাতত বন্ধের মুখে। প্রশ্ন উঠছে— এতদিন ধরে এই ব্যবসাগুলি কীভাবে বেআইনিভাবে ফুলে ফেঁপে উঠল? পুরসভার চোখ ফাঁকি দিয়ে, অথবা কিছু ক্ষেত্রে অনুমতির দোহাই দিয়ে শহরের নানা কোণে ছাদে গজিয়ে উঠেছিল রেস্তরাঁ। অনেক ক্ষেত্রে ভাড়া দিয়ে ছাদকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করা হচ্ছিল, যা মেয়র নিজেই বলেছেন— “ছাদ কমন স্পেস, তা বিক্রি করা যায় না।”
তবে এই পদক্ষেপে আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়িক ক্ষয়ক্ষতির। বহু তরুণ উদ্যোক্তা এই রেস্তরাঁগুলি গড়ে তুলেছিলেন বিপণনের নতুন ধারায়। শহরের ফুড কালচারে রুফটপ রেস্তরাঁগুলি অনন্য স্বাদ যোগ করেছিল। এখন সেই সব উদ্যোগই থমকে গেল।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সমাধান একপাক্ষিক বন্ধে নয়, বরং নিয়ন্ত্রিত লাইসেন্সিং ও কঠোর অগ্নি নিরাপত্তা নীতিতে। যদি আগেভাগে ন্যূনতম ফায়ার কমপ্লায়েন্স বাধ্যতামূলক করা হতো, তবে মেছুয়ার মতো ঘটনা এড়ানো যেত।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলছেন, শুধুমাত্র পুরসভার উপর দোষ চাপালে হবে না, সাধারণ মানুষেরও সচেতন থাকা দরকার। ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যবহার পর্যন্ত নজরদারি জরুরি। কিন্তু এখানেই আরও বড় প্রশ্ন— যখন ছাদের উপর এই সব ব্যবসা চলছে, তখন সেই ভবনের অ্যাসেসমেন্ট, অনুমোদন, বা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব কি ঠিকমতো পালিত হচ্ছিল?
শুধুই বন্ধ নয়, দরকার কাঠামোগত পুনর্বিবেচনা
এখন সময় এসেছে ছাদের ব্যবহার নিয়ে স্পষ্ট নীতি তৈরি করার। নিরাপত্তা ও ব্যবসার মাঝে ভারসাম্য রক্ষাই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। শুধু বিপদ ঘটার পরে পদক্ষেপ নয়— শহর চায় আগাম সচেতনতা, এবং প্রযুক্তি নির্ভর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা।