খবর অনলাইন ডেস্ক: সাইবার প্রতারণা থেকে শুরু করে নকল কাগজপত্রে জালিয়াতি—২০২৩ সালে আর্থিক অপরাধের নয়া রেকর্ড গড়ল কলকাতা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB)-র ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২৩’ রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর কলকাতা পুলিশ ৫৬৪টি আর্থিক অপরাধের মামলা নথিভুক্ত করেছে যেখানে প্রতিটি মামলায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকার বেশি।
এই সংখ্যা দেশের সমস্ত শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রিপোর্টটি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী,
- ৩৯১টি মামলা ছিল যেখানে ক্ষতির অঙ্ক ১ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে,
- ১৭৩টি মামলা ছিল যেখানে ক্ষতি ১০ কোটি টাকার বেশি।
তবে কলকাতায় ৫০ কোটির বেশি ক্ষতির কোনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি।
তুলনায়, দিল্লিতে ৫০ কোটির বেশি ক্ষতির ১৯টি এবং ১০০ কোটির বেশি ক্ষতির ১১টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২৩ সালে কলকাতা পুলিশ আরও জানিয়েছে—
- ৬৫টি মামলাতে ক্ষতি হয়েছে ১ লক্ষ টাকার কম,
- ২৫৬টি মামলাতে ক্ষতি ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে,
- ২০২টি মামলাতে ক্ষতি ১০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে।
২০১৯ সালের তুলনায় বিশাল বৃদ্ধি
২০২০ সালে, অর্থাৎ কোভিড মহামারির বছরে, কলকাতায় ১ কোটির বেশি ক্ষতির মাত্র ৩৯টি মামলা হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৭, অর্থাৎ প্রায় ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি।
২০২৩ সালের অধিকাংশ মামলা সাইবার প্রতারণা সংক্রান্ত বলে জানিয়েছে এনসিআরবি।
যদিও আর্থিক অপরাধের মোট সংখ্যা কিছুটা কমেছে —
২০২২ সালে যেখানে ২,০১৩টি মামলা হয়েছিল, ২০২৩ সালে নথিভুক্ত হয়েছে ১,৫৪৪টি মামলা।
তবে দিল্লি (৪,৫৮০), মুম্বই (৬,৭৪৬), বেঙ্গালুরু (৩,৮৫৮), জয়পুর (৫,৩০৪) ও লখনউ (২,৪৪৬)-এর তুলনায় কলকাতা কিছুটা পিছিয়ে।
লালবাজারের এক আধিকারিকের মতে, “মোট মামলার সংখ্যা কমলেও ১ কোটির বেশি ক্ষতির এত মামলা প্রমাণ করে প্রতারকেরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে।”
২০২৩ সালের ১,৫৪৪ মামলার মধ্যে—
- ১৮৯টি মামলা ছিল ক্রিমিনাল ব্রিচ অফ ট্রাস্ট,
- ৮টি মামলা কাউন্টারফিটিং বা জাল মুদ্রা,
- এবং ১,৩৪৭টি মামলা ফরজারি ও চিটিং সংক্রান্ত।
বর্তমানে আগের বছরের ৫,০৯৬টি আর্থিক প্রতারণা মামলার তদন্ত চলছে, যার মধ্যে ১,০৬৪টি মামলায় চার্জশিট দাখিল হয়েছে।
লালবাজারের মতে, এই পরিসংখ্যান আরও একবার প্রমাণ করছে যে, শহরে একটি বিশেষ “অ্যান্টি-ব্যাঙ্ক ফ্রড পুলিশ স্টেশন” গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। সেই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, “জালিয়াতি ও প্রতারণা মোকাবিলায় বিশেষ ইউনিট দরকার। গোয়েন্দা দফতরের যে ইউনিট এখন কাজ করছে, তাদের ওপর চাপ অনেক বেশি।”
আরও পড়ুন: দেদার শব্দবাজিতে আতঙ্ক কলকাতায়! দূষণ কম দাবি পুলিশের, কিন্তু তথ্য বলছে অন্য কথা
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us