চলতি সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার জানাতে চলেছে শহর থেকে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা। একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চেয়েছিল। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের অনুমোদনক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবহণ দফতর লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়ে দেবে।
বর্তমানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্যের এক শীর্ষ আমলার কথায়, “শতাব্দীপ্রাচীন ট্রাম বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে। ট্রামলাইনের জন্য প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং হচ্ছে তীব্র যানজটও। এই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে আর আপস করা সম্ভব নয়। সমস্ত ট্রাম রুট বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং অচল রুটগুলির ট্রামলাইন তুলে ফেলা হবে। তবে সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে।”
ট্রামের ‘স্বর্ণযুগে’ কলকাতায় ২৭-২৮টি রুটে ট্রাম চলত। দেড় দশক আগেও এক ডজন রুটে ট্রাম সচল ছিল। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ট্রামের গুরুত্ব আরও কমে যায়। ওই ঘটনার পর সরকার শহরের ব্রিজগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষা শুরু করে এবং উড়ালপুলগুলির উপরে থাকা সমস্ত ট্রামলাইন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে পূর্তদপ্তর। এরপর ট্রামের চলাচল আরও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে মাত্র তিনটি রুটে যাত্রীরা ট্রাম পরিষেবা পান, টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট-ধর্মতলা, এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজার। নবান্নের সিদ্ধান্তে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমোদন পেলে এই তিন রুট থেকেও ট্রাম বিদায় নেবে।
আরেক শীর্ষ আমলা বলেন, “এখন আমরা ইলেকট্রিক গাড়ির উপর বাড়তি জোর দিচ্ছি। সেই সূত্রে ই-ভেহিকলে একাধিক ছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ট্রাম উঠে গেলে সাধারণ মানুষের বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”
এই প্রসঙ্গে লালবাজারের এক পুলিসকর্তার পর্যবেক্ষণ, “শহরের জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। প্রতিদিন যান নিয়ন্ত্রণ করতে কালঘাম ছুটে যায়। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম তুলে দেওয়ার কথা বলে আসছি। এতদিনে সেটাই হতে চলেছে।”
১৫০ বছরের ঐতিহ্য পেরিয়ে স্তব্ধ হতে চলেছে কলকাতার ট্রাম।