কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ট্রেনি মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটার পর কেটে গিয়েছে ২৪টা দিন। ‘রাত দখল’ থেকে শুরু করে মৌন মিছিল, নবান্ন অভিযান থেকে শুরু করে ধর্মতলায় টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রাতভর ধরনা, সবই ঘটছে। পথে নেমেছেন মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সর্ব স্তরের, সব পেশার মানুষ। আর চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা তো পথে রয়েইছেন। সোমবারও মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয় মহানগর।
সোমবার ‘লালবাজার অভিযান’-এর ডাক দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। দুপুর ২টোয় এক বিশাল মিছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে লালবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই মিছিলের মূল দাবি ছিল ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে বিনীত গোয়েলকে পদত্যাগ করতে হবে’। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতেই ‘লালবাজার অভিযান’-এর কর্মসূচি নেওয়া হয়।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড় থেকেই মিছিল আটকে দেওয়া হয়। ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকানো। লোহার উঁচু, চওড়া ব্যারিকেড। মিছিলকারীদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল নিয়ে প্রস্তুত থাকে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মিছিলকারীদের প্রতিনিধিদের লালবাজারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু মিছিলকারীদের তরফ থেকে জানানো হয় মিছিল এত দূরে রেখে যেতে তাঁরা নিরাপত্তা বোধ করছেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই বসে পড়েন, শুরু হয় অবস্থান।

কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হল মিছিল। তার পর বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অবস্থান। ছবি: রাজীব বসু।
মিছিলকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার অশেষ বিশ্বাস। তিনি লালবাজারে এসে কথা বলতে বললেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের ইস্তফার দাবিতে অনড় মিছিলকারীরা। তাঁদের দাবি, যত দূর মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তত দূর পর্যন্ত যেতে দিতে হবে মিছিল। মিছিলকারীদের তরফ থেকে জানানো হয়, আগে পুলিশ জানিয়েছিল বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট এবং বিবি গাঙ্গুলি ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বেঁকে বসেছে পুলিশ। এর অনেক আগেই মিছিল আটকে দিয়ে বলা হচ্ছে, ২০ জনের প্রতিনিধিদল পাঠান। এসব মানা হবে না। যতক্ষণ না পুলিশ কমিশনার আসছেন, অবস্থান আন্দোলন চলবে। জুনিয়র ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে অভ্যস্ত। রাত জাগতে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই! যতক্ষণ না ওঁদের দাবি মানা হচ্ছে ততক্ষণ অবস্থান চলবে।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল, তবু রাস্তা ছেড়ে নড়লেন না আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে ভাবেই বসে থাকবেন তাঁরা। জানালেন, প্রয়োজনে অবস্থান চলবে সারা রাত। ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনারের কুশপুতুল পোড়ানো হল। রাস্তায় লেখা হচ্ছে নানা স্লোগান।

সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি খবর পেয়ে জুনিয়ার ডাক্তারদের জয়োল্লাস। ছবি: রাজীব বসু।
সন্ধের দিকে খবর এল গ্রেফতার হয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁর গ্রেফতারির খবরে খুশির ঢল। তবে এর ফলে আন্দোলন যে থামবে না তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সন্দীপ গ্রেফতার হলেও আন্দোলন চলবে।
রাত গড়িয়েছে। অবস্থানকারীদের মাঝে এসে পৌঁছোলেন অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল, দেবলীনা দত্ত এবং সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তবে তাঁর আসায় স্পষ্টতই অখুশি অবস্থানকারীরা। স্লোগান উঠল ‘গো ব্যাক’।
রাত বেশ গভীর। সেই জায়গাতেই রাস্তার ওপরেই শুয়ে-বসে আছেন অবস্থানকারীরা। সেখানেই খাওয়াদাওয়া, সেখানেই ত্রিপল, বড়ো প্লাস্টিক পেতে একটু গড়িয়ে নেওয়া। ব্যারিকেডের ওপারে বসে রয়েছে পুলিশ।

আরজি করের সোনাগাছি যৌনকর্মীদের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: রাজীব বসু।
যৌনকর্মীদের মিছিল
আরজি কর কাণ্ডে বিচারের দাবিতে সোনাগাছির যৌনকর্মীরা এদিন মিছিল বের করেন। ‘আমরা পদাতিক’-এর পক্ষ থেকে মিছিল আয়োজন করা হয়। মিছিলকারীদের হাতে ছিল নানা পোস্টার, ব্যানার। তাতে লেখা – ‘বিচার চাই বিচার চাই, দোষীদের শাস্তি চাই’, ‘লজ্জা – যে দেশে ধর্ষকের পক্ষে উকিল পাওয়া যায় সে দেশ কিভাবে ধর্ষণ মুক্ত হবে’ ইত্যাদি। মিছিল যায় সোনাগাছি থেকে শোভাবাজার পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
অবশেষে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত সন্দীপ ঘোষ, গ্রেফতার তাঁর তিন শাগরেদও