কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারব্যবস্থার পবিত্রতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। শনিবার, ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একটি আলোচনাসভায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের উপস্থিতিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের ৮৮টি ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫টি মহিলাদের জন্য। ৯৯টি মানবাধিকার কোর্ট রয়েছে। আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু আমার অনুরোধ, বিচারব্যবস্থায় কোনও রকম রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিত নয়। বিচারব্যবস্থার একদম বিশুদ্ধ এবং সৎ থাকা উচিত। গোপনীয়তা বজায় থাকা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকেও নিজেদের পরিবারের সদস্য বলে মনে করুন। আমিও আইনের লোক। আমি তিন-চারটি কেস লড়েছি। বিচারব্যবস্থা আমাদের কাছে পবিত্র, মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারের মতো। সরকার বিচারব্যবস্থার সঙ্গে আছে। যদি বিচারব্যবস্থা আমাদের সাহায্য না করে, তা হলে মানুষ কোথায় যাবে? যখন মানুষের জীবনে সমস্যা আসে, তখন মানুষের বিশ্বাস থাকে যে, দেশের বিচারব্যবস্থায় আমাদের রক্ষা করবে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় দেশের বিচারব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করছেন। আমরা বিচারব্যবস্থাকে উন্নত করতে হাজার কোটি খরচ করেছি। ৭০ একর জমি দিয়েছি। রাজারহাটে নতুন হাই কোর্টের জায়গা দিয়েছি।”
দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সাংবিধানিক নৈতিকতার গুরুত্ব নিয়ে বলেন, “সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে যে, এক জন ভারতীয় যেমন চায় তেমন ভাবতে পারে, যা চায় তা বলতে পারে, যাকে চায় তার পূজা করতে পারে, যাকে অনুসরণ করতে চায় করতে পারে, যা চায় খেতে পারে, যাকে চায় বিয়ে করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে যে, বৈচিত্রকে গ্রহণ করো এবং সহনশীল হও।”
চন্দ্রচূড় বিচারকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, “জনতা বলে, আদালত ন্যায় এবং বিচারের মন্দির। আমরা নিজেদেরকে সেই মন্দিরের দেবতা ভেবে ভুল করি। এটা খুব বিপদের। আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমার সামনে আদালতকে কেউ মন্দির বললে আমি তাঁদের বাধা দিই। মন্দির বললেই মনে হয় বিচারকেরা দেবতা। আমি মনে করি বিচারকরা মানুষের সেবক। বিচারকেরা বিচার করুন, কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভূতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা মানুষ। বিচারপতিরা যেন সমাজের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করেন। বিচার করতে হবে সমাজকে নিয়ে সংবিধান মাথায় রেখে।”
এই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় উভয়ই বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে বিচারব্যবস্থার পবিত্রতা ও সাধারণ মানুষের আস্থা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা।