কলকাতা: ইতিহাস হয়ে গেল কলকাতার ট্রাম। ১৫১ বছরের প্রাচীন এই যানের স্থান হবে এখন কলকাতাবাসীর স্মৃতিতে আর মিউজিয়ামে। এই মহানগরীতে ট্রামের বাণিজ্যিক যাত্রা শেষ হয়ে গেল। শুধুমাত্র আনন্দনগরীর ঐতিহ্যের স্মারক হিসাবে ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ট্রাম চালানো হবে পর্যটকদের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
পরিবহণমন্ত্রী বলেছেন, ধীরগতির যান ট্রামের চলাচলের জন্য ব্যস্ত সময়ে কলকাতার রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম হচ্ছে। যাত্রীদের এখন যাতায়াতের জন্য দ্রুত গতির যান দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই যান চালানো যায় না।
“১৮৭৩ সালে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হওয়ার পর থেকে এই যান নিঃসন্দেহে কলকাতার অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য। গত শতকে শহরে পরিবহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ট্রাম।
“কিন্তু কলকাতার মোট সারফেস এরিয়ার মাত্র ৬% রাস্তা। যানবাহন রোজ রোজ বাড়ছে। আমরা দেখেছি, সেই আগের রুটে ট্রাম আর চালানো যাচ্ছে না। যানজট বেড়েই চলেছে”, সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পরিবহণমন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, ট্রাম চালানোর বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে ঝুলে রয়েছে। আগামী শুনানিতেই রাজ্য সরকার ট্রাম সম্পর্কে তাদের এই বক্তব্য পেশ করবে।
জনস্বার্থে দায়ের করা একটি আবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট কলকাতা শহরে ট্রাম পরিবহণকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে তৈরি মডেলের প্রস্তাব দেয়। শহরের বিভিন্ন রুটে অবশ্য ইতিমধ্যে ট্রাম চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ছবি ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের ‘এক্স’ থেকে নেওয়া।
মন্ত্রী বলেন, “ব্যস্ত সময়ে ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য সাধারণ মানুষের যাতে অফিস পৌঁছোতে দেরি না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিয়েই ট্রাম উঠিয়ে দেওয়ার মতো একটি কঠিন সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হচ্ছে।”
মন্ত্রী জানান, ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ট্রাম চলবে, কলকাতার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। স্থানীয় মানুষজন এবং বাইরের পর্যটকরা ওই ট্রামভ্রমণ উপভোগ করবেন।
প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন
একসময়ে ভারতের ১৫টা শহরে ট্রাম চলত। শেষ পর্যন্ত এই কলকাতাতেই ট্রাম টিকে ছিল। সেই ট্রাম তুলে দেওয়ার খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে শহরবাসীর মধ্যে। ট্রামপ্রেমীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার কথা জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের ৫টা ডিপোতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখানো হবে।
পরিবেশকর্মী এবং ট্রামপ্রেমী সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বলেন, “আমরা এটা হতে দেব না। ট্র্যাফিক জ্যাম নিয়ে রাজ্য সরকার যদি এতই উদ্বিগ্ন হন, তাহলে দখলদারদের উচ্ছেদ করুক, রাস্তা চওড়া করুক। পরিবেশ-বান্ধব এই ট্রাম কখনোই ধীর গতির যান নয়। গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ কিমি। কলকাতা শহরে অটোমোবাইলের গড় গতি এটাই।”
অ্যাসোসিয়েশনের আর-এক সদস্য কৌশিক দাস বলেন, বেশ কিছু বছর ধরে বিভিন্ন ডিপোয় পড়ে থাকা ট্রামগুলো যদি ঠিকমতো মেরামতি করে দেখভাল করা হত তাহলে আজ শহরে ট্রাম পরিবহণ খুব স্বাভাবিক থাকত। কলকাতার ট্রামের জন্য অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই একটি হ্যাশট্যাগ অভিযান শুরু করে দিয়েছে।
“ট্রাম বাঁচানোর জন্য এই সপ্তাহেই আন্দোলন শুরু হবে”, বলেছেন কৌশিকবাবু।