রাতের ডিউটিতে আলোআঁধারি করিডোর পেরিয়ে ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়ার সময় কারওর ভরসা সঙ্গে থাকা পেপার স্প্রে বা ছোট্ট ছুরি। কেউ আবার আত্মরক্ষার শক্তিতেও ভরসা রাখতে পারছেন না। প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষীতেই ভরসা খুঁজছেন। সার্বিকভাবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা রাতের ডিউটিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দেশের ২৪.১% ডাক্তার নাইট শিফটের ডিউটিতে নিজেদের অসুরক্ষিত বলে মনে করেন। ১১.৪% ডাক্তার নিজেদের একেবারেই সুরক্ষিত বলে মনে করেন না।
আরজি কর কাণ্ডের আবহে অনেক ডাক্তারই, যাঁদের অধিকাংশ মহিলা, রাতের ডিউটির সময় ব্যাগে অস্ত্র রাখতে শুরু করেছেন আত্মরক্ষার তাগিদে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র করা সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায়। আরজি কর কাণ্ডের পর এই সমীক্ষা চালান কেরলের আইএমএ’র সদস্য তথা রিসার্চ সেলের চেয়ারম্যান রাজীব জয়দেবন।
রাজীব জয়দেবন জানান, ৩৮৮৫ জন ডাক্তার এই অনলাইন সমীক্ষায় যোগ দেন। এ বিষয়ে এটিই বৃহত্তম সমীক্ষা বলে দাবি করেছে আইএমএ। ২২টি রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা এই অনলাইন সমীক্ষায় তাঁদের মতামত জানান। এর মধ্যে ৮৫%-এর বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে। ৬১% ইন্টার্ন বা স্নাতকোত্তর পাঠরত ট্রেনি ডাক্তার। সমীক্ষায় যাঁরা নিজের মতামত জানিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৬৩% মহিলা ডাক্তার।
সমীক্ষায় যোগদানকারী ডাক্তারদের ৪৫% জানিয়েছেন, নাইট শিফটে কোনো ডিউটিরুম থাকে না। ফলে রাতে কাজ করার সময় ডাক্তারদের বিশ্রাম নেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না বলে আইএমএ’র সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, ডিউটিরুম থাকলেও তার দরজার তালা ভাঙা থাকে। কখনও বা একটা ডিউটিরুমে এত ঠাসাঠাসি ভিড় থাকে যে বিশ্রাম নেওয়া যায় না। অনেক সময়ই আবার ৫৩% ক্ষেত্রে ডিউটিরুম ওয়ার্ড থেকে দূরে হয়। অনেক সময়ই ডিউটিরুমে শৌচাগার থাকে না। ব্যক্তিগোপনীয়তাও থাকে না। শৌচাগারের অভাবে ডাক্তারদের বাইরেও যেতে হয়।
অনলাইনে সমীক্ষার জন্য গুগল ফর্ম পাঠানো হয় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩৮৮৫ জন মতামত জানান।
প্রত্যেকেই একবাক্যে হাসপাতালে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী রাখা, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো এবং পর্যাপ্ত আলো রাখার কথা বলেছেন। ওয়ার্ডে অচেনা-অজানা ব্যক্তিদের বিনা অনুমতিতে ঘোরাঘুরি করার কথাও অনেকে বলেছেন। অনেক ডাক্তারই বলেছেন, ওয়ার্ডে রোগী দেখার সময় তাঁরা কোনো না কোনো সময় মাদকাসক্ত বা মদ্যপায়ীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। অনেক মহিলা ডাক্তারই ভিড়ে ঠাসা এমারজেন্সি রুমের মধ্যে শরীরে অবাঞ্ছিত স্পর্শের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন।
পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গীন ছোটো হাসপাতালে যেখানে পর্যাপ্ত হাসপাতালের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী নেই। প্রত্যেকেই অভিযোগ করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। জুনিয়র চিকিৎসকরা বিশেষ করে হামলার শিকার হন। সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয় না। প্রত্যেক ডাক্তারই একযোগে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন চালু করার আর্জি জানান।
আরও পড়ুন
বন্ধে সমর্থন নেই, শান্তিপূর্ণ পথেই আন্দোলন জারি রাখতে চায় আরজি কর