বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্রের মধ্যে একটি হল একে-৪৭ (AK-47)! এটি এমন একটি রাইফেল যা বিশ্বের অনেক দেশের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। আবার সন্ত্রাসবাদী, দুষ্কৃতীদেরও প্রথম পছন্দ।
বিভিন্ন দেশে সরকারি সেনাবাহিনী ছাড়াও জঙ্গিগোষ্ঠীরও প্রথম পছন্দ এই একে-৪৭। আল কায়দা থেকে আইএসআইএস, সবাই এই রাইফেল ব্যবহার করে। ওসামা বিন লাদেনের এমন অনেক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তার হাতে একটি একে-৪৭ ধরে থাকতে দেখা যায়।
আসা যাক ভারতের কথায়। এ দেশে একে-৪৭ সাধারণ মানুষের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দুষ্কৃতীরা এই রাইফেল ব্যবহার করে আসছে। ভারতে দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানি থেকে শুরু করে শ্রীপ্রকাশ শুক্লা পর্যন্ত সবাই একে-৪৭ ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রাইফেলের বিশেষত্ব এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে পছন্দের রাইফেল বানিয়েছে।
এর কারণ জানতে হলে একটু পিছনের দিকে তাকাতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এমন একটি অস্ত্র তৈরি করতে শুরু করেছিল যা পুরনো রাইফেল এবং মেশিনগানের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারে। নতুন এই অস্ত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় ট্যাঙ্ক কমান্ডার মিখাইল কালাশনিকভকে। কালাশনিকভ বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত রাইফেল একে-৪৭ ডিজাইন করেছিলেন। মিখাইলের বন্দুক তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তবুও তিনি এই নতুন অস্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই রাইফেলের পুরো নাম ‘Avtomat Kalashnikova 1947’, যাকে সংক্ষেপে একে-৪৭ বলা হয়।
কার্যকরী ক্ষমতা তো আছেই, একে-৪৭ আর যেসব কারণে জনপ্রিয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। একে-৪৭-এর রক্ষণাবেক্ষণ সবচেয়ে কম। পশ্চিমের অস্ত্রগুলি সুন্দরভাবে খোদাই করা কাঠ দিয়ে তৈরি। গায়ে পালিশ করা। একে-৪৭-এর নকশা খুবই সাধারণ। একে-৪৭- এর ডিজাইন সুন্দর নাও হতে পারে তবে এটি বেশ শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য। এই রাইফেলের ব্যবহারও বেশ সহজ। এই রাইফেলটি এমনকি জল, কাদা এবং বালিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে, এমনকি যদি এটি বেশ কয়েক মাস পরিষ্কার না করা হয়, তা হলেও এটি কোনো নিশানকে পুরোপুরি খতম করতে সক্ষম। এমনই সব বিশেষত্ব একে-৪৭- কে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
একে-৪৭ হাতে নিয়ে ছবি তোলাও এখন গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই একটা ভঙ্গিই বুঝিয়ে দিতে পারে অস্ত্র বহনকারী কতটা শক্তিশালী। বিশ্বের বড় বড় অপরাধী এবং বিদ্রোহী মনের মানুষ একে-৪৭-এর সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে গর্ববোধ করে। শুধু কি তাই, হিজবুল্লাহ-সহ বিশ্বের অনেক বিদ্রোহী সংগঠন তাদের পতাকায় একে-৪৭ ব্যবহার করেছে।
বলে রাখা ভালো, একে-৪৭ এর স্রষ্টা কালাশনিকভ ২০১৩ সালে মারা যান, কিন্তু এই রাইফেলটি তাঁর জীবদ্দশায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কালাশনিকভ নিজের তৈরি রাইফেল নিয়ে একইসঙ্গে গর্ব ও দুঃখ প্রকাশও করেছেন।
আরও পড়ুন: দরজা খুলতেই স্বমূর্তি ধারণ, ভর সন্ধ্যায় খাস কলকাতায় ফ্ল্যাটে ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা, গুলি