Home খবর দেশ ভারতের ৩ কফ সিরাপে মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক, সতর্ক করল WHO

ভারতের ৩ কফ সিরাপে মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক, সতর্ক করল WHO

WHO on Cough syrup

মধ্যপ্রদেশে একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে উঠল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। শিশুদের মৃত্যু ঘটিয়েছে এমন বিষাক্ত কফ সিরাপের নমুনা পাওয়া গিয়েছে ভারতের তিনটি সংস্থার তৈরি ওষুধে — এমনটাই জানিয়েছে WHO।

শনাক্ত হওয়া তিনটি কফ সিরাপ হল —

  1. ‘কোল্ডরিফ’ (Coldrif Syrup) — প্রস্তুতকারক: স্রেসন ফার্মাসিউটিক্যালস (Sresan Pharmaceuticals), তামিলনাড়ু
  2. ‘রেসপিফ্রেশ টিআর’ (Respifresh TR Syrup) — প্রস্তুতকারক: রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস (Rednex Pharmaceuticals)
  3. ‘রিলাইফ’ (ReLife Syrup) — প্রস্তুতকারক: শেপ ফার্মা (Shape Pharma)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই সিরাপগুলি শরীরে মারাত্মক, জীবনহানিকারক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। WHO-এর নির্দেশে ইতিমধ্যেই সব দেশকে সতর্ক করা হয়েছে, এবং কোনো দেশে এই সিরাপ পাওয়া গেলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি

WHO-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সিরাপগুলিতে ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (Diethylene Glycol বা DEG) নামের এক বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে, যা অতীতে একাধিক মারণ ওষুধ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত।

ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) জানিয়েছে, ‘কোল্ডরিফ’ কফ সিরাপে DEG-এর পরিমাণ অনুমোদিত সীমার প্রায় ৫০০ গুণ বেশি।

ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই রাসায়নিকের ঘনত্ব ৪৮ শতাংশের বেশি, যেখানে সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমা মাত্র ০.১ শতাংশ

এই বিষাক্ত সিরাপ খেয়ে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলার পারাসিয়া গ্রামে অন্তত ২২ জন শিশু (সবাই পাঁচ বছরের নিচে) প্রাণ হারিয়েছে।

সংস্থা ও সরকারের পদক্ষেপ

তামিলনাড়ুভিত্তিক স্রেসন ফার্মাসিউটিক্যালস-এর উৎপাদন লাইসেন্স পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। সংস্থার মালিক জি. রঙ্গনাথনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  তামিলনাড়ুর অন্যান্য ওষুধ নির্মাতা সংস্থার কারখানাগুলিতেও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, দুই বছরের নিচের শিশুদের কোনওভাবেই কফ সিরাপ প্রেসক্রাইব করা যাবে না,
এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রেও তা সাধারণত সুপারিশযোগ্য নয়।

WHO-এর পর্যবেক্ষণ ও ভারতের অবস্থান

WHO ভারত সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল, এই সিরাপগুলি অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়েছিল কি না।
ভারত সরকার জানিয়েছে, এই তিনটি ওষুধই কেবল ভারতের বাজারে বিক্রি হয়েছে, বিদেশে রপ্তানি করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও WHO-কে জানিয়েছে, এই বিষাক্ত সিরাপগুলির কোনও একটিও তাদের দেশে প্রবেশ করেনি।

তবে WHO স্পষ্ট জানিয়েছে, “এই সিরাপগুলিতে DEG-এর উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি কিডনি বিকল থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।”

DEG — ক্ষতিকর রাসায়নিক

অতীতে বহুবার মারাত্মক ওষুধ কেলেঙ্কারিতে প্রতিবারই ওষুধের মধ্যে ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (DEG) পাওয়া গিয়েছে । ১৯৯০-এর দশকে দিল্লি, ২০২২ সালে গাম্বিয়া এবং ২০২৩ সালে উজবেকিস্তান — সবক্ষেত্রেই DEG দূষিত কফ সিরাপ শিশুদের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

ভারতে আবারও একই রাসায়নিকের কারণে শিশুমৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version