মাওবাদের বিরুদ্ধে আরও এক বড় সাফল্য পেল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় যৌথ অভিযানে ১৬ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, এটি মাওবাদের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত আঘাত’। পাশাপাশি, তিনি বার্তা দিয়েছেন— অস্ত্র এবং হিংসা দিয়ে পরিবর্তন আনা যায় না, কেবলমাত্র শান্তি ও উন্নয়নই প্রকৃত সমাধান।
সুকমায় রাতভর অভিযানে নিহত ১৬ মাওবাদী
শুক্রবার রাতে গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-দান্তেওয়াড়া জেলার সীমানায় উপমপল্লি কেরলাপাল এলাকার জঙ্গলে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। সিআরপিএফ, ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি) এবং পুলিশের যৌথবাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে চিরুনিতল্লাশি শুরু করে।
নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে মাওবাদীরা প্রথমে গুলি চালাতে শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় বাহিনীও। রাতভর তীব্র গুলির লড়াইয়ের পর ১৬ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর পরিমাণে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
অমিত শাহের প্রতিক্রিয়া: শান্তি ও উন্নয়নই একমাত্র পথ
শনিবার সকালে এই অভিযানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘‘নকশালবাদের উপর আরও এক বার আঘাত নেমে এল! আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের আগেই আমরা দেশ থেকে নকশালবাদ নির্মূল করব।’’
শুধু মাওবাদী দমন অভিযানই নয়, অস্ত্র হাতে থাকা বিদ্রোহীদের প্রতিও বার্তা দিয়েছেন তিনি। অমিত শাহ বলেন, ‘‘অস্ত্র এবং হিংসা কখনও পরিবর্তন আনতে পারে না। শুধুমাত্র শান্তি এবং উন্নয়নই পারে প্রকৃত পরিবর্তন ঘটাতে।’’
২০২৬ সালের মধ্যে ‘মাওবাদ মুক্ত’ ভারতের লক্ষ্যে কেন্দ্র
এর আগেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশকে ‘মাওবাদীমুক্ত’ করা হবে। বিজেপি ছত্তীসগঢ়ের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি সংসদে দেওয়া এক বিবৃতিতে অমিত শাহ জানান, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশে ১৬,৪৬৩টি মাওবাদী হিংসার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১,৮৫১ জন নিরাপত্তা কর্মী শহিদ হয়েছেন। তবে গত এক দশকে হিংসার ঘটনা ৫৩ শতাংশ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩ শতাংশ কমেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
মাওবাদ দমনে আরও কঠোর কেন্দ্র
সরকারের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, আগামী দিনে মাওবাদী দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিকে মূলস্রোতে ফেরানোর প্রচেষ্টা চলছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে অনেক গ্রামবাসীও মারা গিয়েছেন। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে সেই তথ্য অস্বীকার করা হয়েছে।