দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চিন নিজের সামরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করছে। এই দুই দেশের কাছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করছে চিন। তবে এই প্রেক্ষাপটে, দেশের উন্নত বিমানশক্তি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এখনও সুস্পষ্ট কৌশলগত প্রাধান্য ধরে রেখেছে ভারত।
চিন থেকে পাকিস্তানে
চিনের দীর্ঘদিনের ‘প্রতিরক্ষা মিত্র’ পাকিস্তান সম্প্রতি তার বিমানবহরে আরও কয়েকটি JF-17 থান্ডার যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে। যদিও এই বিমানগুলি চিনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি এবং খরচ সাশ্রয়ী হলেও ভারতের উন্নত যুদ্ধবিমানের তুলনায় প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক পিছিয়ে।
চিনের তৈরি J-10C যুদ্ধবিমানও অন্তর্ভুক্ত করেছে পাকিস্তান। এই চতুর্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার বিমান আধুনিক রাডার সিস্টেম এবং উন্নত অস্ত্র বহনে সক্ষম।
চিন থেকে বাংলাদেশে
চিনের কাছ থেকে J-10C যুদ্ধবিমান কেনার জন্য আলোচনা করছে বাংলাদেশ। এই চুক্তি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশ মিগ-২৯ এবং এফ-৭ যুদ্ধবিমানের মতো পুরনো প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীল। তবে এই চুক্তি চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায় নির্দেশ করে।
ভারতের উন্নত বিমান শক্তি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ভারতের বিমান শক্তি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী।
ভারতের বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে রাফাল, সুখোই Su-30MKI, মিরাজ ২০০০ এবং তেজস। উন্নত অস্ত্র এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা দ্বারা সজ্জিত এই প্ল্যাটফর্মগুলি পাকিস্তানের JF-17 বা বাংলাদেশের পুরনো বিমানের তুলনায় অনেক বেশি আধুনিক।
রাফাল: মেটিওর মিসাইল এবং উন্নত রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতের যুদ্ধক্ষমতায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করছে রাফাল।
বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
আধুনিক S-400 ট্রায়াম্ফ মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারত, যা দীর্ঘ দূরত্ব থেকে হুমকি শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। দেশীয় আকাশ মিসাইল সিস্টেম এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী মাল্টি-লেয়ার ডিফেন্স শিল্ড গড়ে তোলা হয়েছে।
যুদ্ধ প্রস্তুতি ও সক্ষমতা
ভারতীয় বিমানবাহিনী সংখ্যায় এবং অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে।
- যুদ্ধবিমান সংখ্যা: ভারতের কাছে ৫০০টিরও বেশি উন্নত যুদ্ধবিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে ৪০০ এবং বাংলাদেশের মাত্র ৫০টি।
- সামরিক বাজেট: ভারতের সামরিক বাজেট ৭৫০০ কোটি ডলার, যা পাকিস্তানের ১০০০ কোটি ডলার এবং বাংলাদেশের ৫০০ কোটি ডলারের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
চিনের প্রভাব এবং ভারতের অবস্থান
চিন নিজের প্রতিরক্ষা রফতানির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতীয় কৌশলগত স্বার্থের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তবে ভারতের আধুনিকায়ন উদ্যোগ—যেমন তেজস মার্ক-II যুদ্ধবিমান এবং উন্নত ড্রোন প্রকল্পগুলি—দেশকে আঞ্চলিক আকাশসীমায় একটি নিরঙ্কুশ প্রাধান্য দিচ্ছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চিনের সহায়তায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। তবে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সুসংহত প্রতিরক্ষা নীতিমালার কারণে ভারত এখনও এই অঞ্চলে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে