Home খবর দেশ ৬ দিন ধরে কাররেগুট্টা পাহাড় ঘিরে রেখেছে ৭ হাজারেরও বেশি জওয়ান, লক্ষ্য...

৬ দিন ধরে কাররেগুট্টা পাহাড় ঘিরে রেখেছে ৭ হাজারেরও বেশি জওয়ান, লক্ষ্য মাওবাদী শীর্ষনেতারা

মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান

বিজাপুর: ছয়দিন ধরে ছত্তীসগঢ়-তেলেঙ্গানা সীমান্তের কাররেগুট্টা পাহাড় ঘিরে রেখেছে প্রায় ৭ হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনী। ৭০০ মিটার উচ্চতার এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই দুর্গম পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে মাওবাদী শীর্ষনেতারা — এমনটাই মনে করছেন নিরাপত্তা আধিকারিকরা। পাহাড় রক্ষায় মোতায়েন রয়েছে মাওবাদীদের সবচেয়ে বিপজ্জনক ইউনিট, পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (PLGA)-র ব্যাটেলিয়ন ১।

২০২৪ সাল থেকে লাগাতার চলা ‘অ্যান্টি-নকশাল’ অভিযানের চূড়ান্ত পর্ব এই অভিযান, জানিয়েছেন এক শীর্ষ আধিকারিক। ইতিমধ্যে ৩৬৩ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে এবং নেতৃত্ব গোষ্ঠী পাহাড়ের গা ঘেঁষে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের তালিকায় কারা আছেন?

সুরক্ষাবাহিনীর মতে, ব্যাটেলিয়ন ১ বর্তমানে রক্ষা করছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুল্লুরি প্রসাদ রাও ওরফে চন্দ্রন্না এবং সুজাতা, PLGA প্রধান বারসে দেবা, দক্ষিণ বস্তারের সামরিক কমান্ডার মাদভি হিদমা, দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির সদস্য সন্নু এবং তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটির সদস্য দামোদরকে।

কীভাবে চলছে অভিযান?

অভিযানে যুক্ত রয়েছে সিআরপিএফ-এর ২১০তম ব্যাটেলিয়ন কোবরা ইউনিট, ছত্তীসগঢ় পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF), ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (DRG), এবং অন্যান্য সিআরপিএফ ইউনিট।

এই মুহূর্তে তিনজন মাওবাদীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, তবে আরও প্রায় আটজন নিহত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিস্ফোরণে দুই জওয়ান সামান্য আহত হয়েছেন।

কেন কঠিন অভিযান?

প্রাক্তন ডিজিপি আর কে বিজয়ের মতে, ব্যাটেলিয়ন ১ পাহাড়ের চূড়ায় থাকায় তারা একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশপথে বিস্ফোরক পুঁতে রাখা এবং স্নাইপার বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বাহিনীকে অত্যন্ত কৌশলে এগোতে হচ্ছে।

উপরে অতিরিক্ত সমস্যা তৈরি করছে তীব্র গরম এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি। যদিও পাহাড়ে কোনও মানববসতি না থাকায় অভিযানে সাধারণ নাগরিকদের ঝুঁকি নেই — যা বাহিনীর জন্য একটি বড় সুবিধা।

রাজনৈতিক আবহে চাপ ও শান্তির আবেদন

এদিকে, এক জোটে আসা ৫৪টি মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং প্রায় ১৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সমাজকর্মী এক যৌথ বিবৃতিতে সরকার ও মাওবাদী উভয় পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁরা সমস্ত ধরনের হিংসা—সেনা অভিযান, নির্বিচার হত্যা, আইইডি বিস্ফোরণ এবং বেসামরিক মৃত্যুর—সমাপ্তির দাবি জানিয়েছেন। মাওবাদীদের প্রতি ‘জন আদালত’-এ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রথাও বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে।

এই আহ্বানের মধ্যেই ৪ এপ্রিল ছত্তীসগঢ় সফরে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ৫ এপ্রিল রায়পুরে অনুষ্ঠিত ‘বস্তার পাণ্ডুম’ উৎসবে তিনি জানান, আগামী চৈত্র নবরাত্রির মধ্যে বস্তার অঞ্চল থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষ্য রয়েছে। শাহ বলেন, “অস্ত্রের মাধ্যমে আদিবাসী উন্নয়ন রোধ করা যাবে না। মূলস্রোতে ফিরে আসুন, বস্তারের উন্নয়নে অংশ নিন।”

এর আগে, ২৮ মার্চ সিপিআই (মাওবাদী) সরকারী অভিযানের অবসান এবং নতুন নিরাপত্তা শিবির স্থাপন বন্ধের শর্তে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। যদিও ছত্তীসগঢ় সরকার আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তারা কোনও শর্ত মানেনি।

অভ্যন্তরীণ সমস্যা

সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলি সরকারকে অভিযান বন্ধ করে অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “মাওবাদী সংঘর্ষ একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা; এটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বাইরের যুদ্ধ নয়। সংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষা করে, আদিবাসীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হোক।”

বিশেষ করে বস্তার (ছত্তীসগঢ়), পশ্চিম সিংভূম (ঝাড়খণ্ড) এবং গড়চিরৌলি (মহারাষ্ট্র)-র আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিকে সংঘর্ষের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, “স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ও কল্যাণ হতে হবে শান্তি আলোচনার প্রথম অগ্রাধিকার।”

পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান যদি যুদ্ধ হয়, কার পাশে কোন দেশ জেনে নিন

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version