দীপাবলির আলোতে যখন দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ, তখনই অন্ধকার নেমে এসেছে এক ভয়ঙ্কর খেলার কারণে — ‘কার্বাইড বন্দুক’ বা ‘কার্বাইড গান’। মধ্যপ্রদেশে এই বাজির বিস্ফোরণে অন্তত ১৪টি শিশু চিরতরে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে, আর বাংলার মালদহেও একই ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি—১০ জন শিশুর চোখে গুরুতর আঘাত।
এই মারণ খেলনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক মাধ্যমে, অনেকেই তা অনুকরণে নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছেন ঘরে বসেই। কিন্তু এর পিছনে যে ভয়ঙ্কর রসায়ন, তা কেউ ভাবেননি।
কী এই কার্বাইড বন্দুক?
কার্বাইড বন্দুক (Carbide Gun) আসলে কোনও বৈধ বাজি নয়, এটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্ট বিস্ফোরক খেলনা। এতে ব্যবহৃত হয়
- ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC₂) এবং
- জল(H₂O)।
দুইয়ের সংস্পর্শে তৈরি হয় অ্যাসিটিলিন গ্যাস (C₂H₂), যা অত্যন্ত দাহ্য। যখন এই গ্যাস কোনও বন্ধ পাত্রে জমে গিয়ে হঠাৎ আগুন বা স্পার্কের সংস্পর্শে আসে, তখন এক প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
এই শব্দকে অনেকেই বাজির বিকল্প আনন্দ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, কিন্তু তা এক মারাত্মক ভুল।
কীভাবে চোখের ক্ষতি করে?
চিকিৎসকদের মতে, কার্বাইড বন্দুক বিস্ফোরণের সময় শুধু শব্দই নয়, আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে
- গরম ধাতব বা প্লাস্টিকের টুকরো,
- তীব্র গ্যাসীয় বাষ্প,
- এবং জ্বলন্ত অ্যাসিটিলিন।
এগুলি চোখে লাগলে হতে পারে ভয়ঙ্কর ক্ষতি—
- চোখের রেটিনা পুড়ে যায়, ফলে স্থায়ী অন্ধত্ব হতে পারে।
- চোখের মণি ও কর্নিয়ায় জ্বালাপোড়া হয়।
- বিস্ফোরণের ধাক্কায় চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গিয়ে দৃষ্টি হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতেন্দু সাহা বলেন, “অ্যাসিটিলিন গ্যাসের বিস্ফোরণ চোখে লাগলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়। অনেক সময় চিকিৎসা করেও তা ফিরিয়ে আনা যায় না।”
বাস্তব উদাহরণ: মালদহের আকাশ ও কিশোর
১৩ বছরের আকাশ বিশ্বাস, গাজোলের বাসিন্দা। দীপাবলির দিন বন্ধুদের সঙ্গে কার্বাইড বন্দুক ফাটাতে গিয়ে চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছে।একইভাবে, হবিবপুরের কিশোর বিশ্বাস বলেন, “আমাদের গ্রামের একটি ছেলে বন্দুক বানিয়েছিল। আগুন ধরলে আমি নেভাতে গিয়েছিলাম। ভুলবশত হাত চোখে লেগে যায়, তারপর থেকেই ঝাপসা দেখি।”
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ক্ষত চোখের রেটিনায় স্থায়ী দাগ ফেলে যায়, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা সারানো অসম্ভব।
কেন এটি নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক
- এটি আইনত বৈধ নয়, কারণ এতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরক শ্রেণিতে পড়ে।
- এতে কোনও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে না—ফলে বিস্ফোরণের মাত্রা অনির্দেশ্য।
- দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি, মুখ ও চোখের বিকৃতি, শ্রবণক্ষতি হতে পারে।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

