একটি চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান উঠে এসেছে ছত্তীসগঢ় বিধানসভায়। উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজয় শর্মা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত ছত্তীসগঢ়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭৭ জন নিরাপত্তারক্ষী, যার মধ্যে ৪০ জনের কাছাকাছি আধাসামরিক বাহিনীর। ওই সময়কালে ১৮টি খুনের ঘটনাও হয়েছে।
কোন বাহিনী থেকে কতজন?
- সিআরপিএফ: ২৬ জন
- বিএসএফ: ৫ জন
- আইটিবিপি: ৩ জন
- SSB, CISF, Tripura Rifles: ১ জন করে
- বাকি ১৪০: ছত্তীসগঢ় পুলিশ, আর্মড ফোর্স, STF ও হোম গার্ডের সদস্য
এই বাহিনীগুলির একটি বড় অংশ রাজ্যের নকশাল-অধ্যুষিত জেলাগুলিতে মোতায়েন রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ চাপের পরিস্থিতিতে কাজ করা, পরিবার থেকে দূরে থাকা—সব মিলিয়ে মানসিক অবসাদ তৈরি করছে।
বছরভিত্তিক আত্মহত্যার সংখ্যা
- ২০১৯: ২৫
- ২০২০: ৩৮
- ২০২১: ২৪
- ২০২২: ৩১
- ২০২৩: ২২
- ২০২৪: ২৯
- ২০২৫ (জুন ১৫ পর্যন্ত): ৮
শুধু আত্মহত্যা নয়, খোদ বাহিনীর মধ্যেই খুন
এই সময়কালে ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে কিছু ছিল ফ্র্যাট্রিসাইড—সহকর্মীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্য জওয়ানরা। বিষয়টি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও মানসিক চাপ নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
কী বলছে তদন্ত?
পুলিশ তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু সাধারণ কারণ:
- পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা
- অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
- হঠাৎ রাগ বা আবেগের বিস্ফোরণ
সরকার কী করছে?
ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কমান্ড স্তর নিচ্ছে বেশ কিছু পদক্ষেপ:
- মনোবিদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং
- গ্রুপ থেরাপি, যোগব্যায়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- গ্রিভ্যান্স রেজিস্টার ও নিয়মিত অভিযোগ শুনানি
- কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর স্তরের জন্য ১৩ মাসের বেতন
- প্রতি সপ্তাহে DGP শুনে থাকেন অভিযোগ (মঙ্গলবার ও শুক্রবার)
- বার্ষিক পর্যালোচনায় পরিকাঠামোগত সমস্যা চিহ্নিত করা হয়
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই সংখ্যাগুলি শুধুই পরিসংখ্যান নয়। এগুলি সেইসব সশস্ত্র রক্ষকদের মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, কাজের চাপ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং সহানুভূতির অভাব মিলিয়ে তারা অনেক সময়েই একা হয়ে পড়েন।
এটাই সময়, শুধু কড়া অনুশাসন নয়, বাহিনীর অভ্যন্তরে সহানুভূতিশীল এবং মানবিক পরিবেশ গড়ে তুলেই মিলবে সমাধান, মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।