সাংবিধানিক সংশোধনীসহ তিনটি বিতর্কিত বিল বুধবার সংসদে পেশ হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রবীণ আইনজীবীরা এর সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রবীণ আইনজীবী ও সমাজকর্মী ইন্দিরা জয়সিং স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিলের পুরোপুরি বিরোধিতা করছেন। এই বিল অনুসারে, কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী জেলে ৩০ দিন থাকলে, এমনকি দোষী সাব্যস্ত না হলেও, তাঁকে পদচ্যুত করা যাবে।
জয়সিং বলেন, “যে দেশে ফৌজদারি আইন ব্যবহৃত হয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে, সেখানে এই প্রস্তাবিত সংশোধনী সংবিধানকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইডি ও সিবিআই যখন কেন্দ্র সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে, তখন কেন্দ্র-রাজ্য সমীকরণ ভেঙে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা বিষয়টি যখন রাজ্যের এখতিয়ার, সেটিও কেড়ে নিচ্ছে এই প্রস্তাব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এভাবে এগোতে থাকলে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম হবে। বিরোধী দলের সব নেতা জেলে, আর কেবল শাসক দলের মন্ত্রীরাই থেকে যাবেন। আমি দুর্নীতির বিরোধী, কিন্তু তার প্রতিকার সৎ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত, জনপদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করে নয়।”
সঞ্জয় হেগড়ে, প্রবীণ আইনজীবী, দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, “অযোগ্যতা জেলের সময়কাল পর্যন্তই কার্যকর। ছাড়া পাওয়ার পর ফের দায়িত্ব নেওয়া যাবে। তবে বড় সমস্যা অপব্যবহার। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে কোনও শক্তিশালী রাজ্য সরকারকেই ভোটের আগে কোণঠাসা করে মুখ্যমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারে। একইভাবে নিজের দল বা জোটের বিরুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে।”
সংবিধান বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাটিয়া এক্স-এ লিখেছেন, “বিলগুলো পাস করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে। বিরোধী দলগুলো একযোগে সমর্থন না দিলে এগুলো কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়।”
ডিএমকে-র রাজ্যসভা সাংসদ ও প্রবীণ আইনজীবী পি. উইলসন এক্স-এ লেখেন, “অমিত শাহ আনা ১৩০তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল ভারতের গণতন্ত্রকে একনায়কতন্ত্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র। এভাবে হিটলারও ১৯৩৩ সালে ‘এনাব্লিং অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে জার্মান সংবিধানকে ধ্বংস করেছিলেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, “ইডি-র মোট ১৯৩টি মামলার মধ্যে মাত্র ২টিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। বাকি ১৯১টি মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও শেষমেশ সিবিআই-ই ক্লোজার রিপোর্ট দিয়েছে।”
উইলসন সতর্ক করে বলেন, “কোনও আঞ্চলিক নেতা যদি প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন মিথ্যা মামলা চাপিয়ে ইডি বা সিবিআই দিয়ে গ্রেফতার করা হবে, তারপর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হবে। এটাই স্পষ্ট পরিকল্পনা।”
সংসদে বিলটি পাসের জন্য বিরোধী শিবিরের অবস্থান কী হবে, এখন সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলে
আরও পড়ুন:
‘১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল: শাহকে ১৫ দিনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অভিষেক