বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ২৫টি দল প্রস্তুত রেখেছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ১৪টি এবং ওড়িশায় ১১টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সমন্বয় করে কাজ করছে। এছাড়াও, জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ এবং বেশ কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
মৌসম ভবনের অনুমান, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার সকালে পুরি (ওড়িশা) ও সাগর দ্বীপ (পশ্চিমবঙ্গ) অঞ্চলের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিমি হতে পারে এবং ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ১২০ কিমি পর্যন্ত বাড়তে পারে। সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সতর্ক রয়েছে হাওয়া অফিস।
ইতিমধ্যে নিম্নচাপ অঞ্চলটি উত্তর আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের পূর্ব-মধ্য অংশে সক্রিয় হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে এটি গভীর নিম্নচাপে এবং তার পরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর নাম হবে ‘দানা’, এই নাম নির্ধারণ করেছে কাতার।
সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ২৪ অক্টোবর রাতে বা ২৫ অক্টোবর সকালে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আছড়ে পড়তে পারে।”
এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভার সচিব টি ভি সোমানাথনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এনসিএমসি) সোমবার একটি পর্যালোচনা সভা করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) মহাপরিচালক কমিটিকে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ এবং তীব্রতা সম্পর্কে অবহিত করেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং উপকূল রক্ষী বাহিনীও স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় রয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ এবং বিমান প্রস্তুত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও টেলিকম মন্ত্রকও জরুরি পরিষেবা এবং পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত দল মোতায়েন করেছে।
সচিব বলেন, “মানুষের জীবনহানি রোধে এবং সম্পত্তি ও পরিকাঠামোর ক্ষতি কমিয়ে আনতে আমাদের সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অন্য দিকে, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় সজাগ রয়েছে। সমুদ্রে থাকা মৎস্যজীবীদের ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলি থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহায়তা জরুরি অবস্থায় সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই রাজ্যই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গকে আশ্বস্ত করেছেন যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিবেশী রাজ্যগুলি যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, এবং ঝাড়খণ্ডকেও ভারী বৃষ্টির কারণে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাঁধগুলির অবস্থাও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে যাতে জলছাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বন্যার ঝুঁকি এড়ানো যায়