“দুই প্রাপ্তবয়স্কের সম্পর্ক বা বিবাহে কেউই হস্তক্ষেপ করতে পারে না।” — এমনই কড়া বার্তা দিল দিল্লি হাই কোর্ট, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে সওয়াল করে।
বিচারপতি সঞ্জীব নারুলা-র বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, “জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১-এর অন্তর্গত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার। রক্তের সম্পর্ক, জাত বা সামাজিক প্রথা ভালোবাসা ও পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।”
জাত-বর্ণের বেড়াজাল ভেঙে সংবিধান রক্ষার বার্তা
আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে, এখনও ভারতের সমাজে জাতপাতের প্রভাব গভীরভাবে বিদ্যমান। বিচারপতি নারুলা বলেন,“আন্তঃজাত বিবাহ সমাজে সংহতি ও একতার পরিবেশ তৈরি করে। জাতিগত বিভাজন কমাতে এর গুরুত্ব অসীম। এমন সম্পর্ককে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে রক্ষা করা উচিত।”
এক আন্তঃজাত দম্পতি ১১ বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন এবং সম্প্রতি বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের পরিবার সেই সম্পর্কে আপত্তি জানায় ও হুমকি দেয়। ফলে দম্পতি আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আদালতের এই পর্যবেক্ষণ।
দম্পতির নিরাপত্তায় পুলিশকে পদক্ষেপের নির্দেশ
দিল্লি পুলিশ আদালতকে জানায়, ইতিমধ্যেই দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য এক কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে।
তবে আদালত আরও এক ধাপ এগিয়ে থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের নির্দেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী—
- স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে দম্পতির নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত পর্যালোচনা করতে হবে।
- প্রয়োজনে ডায়েরি এন্ট্রি, এলাকাভিত্তিক টহল এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
- যদি দম্পতির বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও হুমকি বা হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে, পুলিশকে তাৎক্ষণিক সুরক্ষা দিতে হবে ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ: ‘নির্দেশ প্রতিরোধমূলক, অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণ নয়’
বিচারপতি নারুলা স্পষ্ট করেন, “এই নির্দেশ প্রতিরোধমূলক ও সুরক্ষামূলক। এটি কোনওভাবেই অভিযুক্ত পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই নয়।”
আদালতের এই রায় আবারও প্রমাণ করে, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ভালোবাসা ও বিবাহের অধিকার ভারতের সংবিধানে সুরক্ষিত। কোনও পরিবার, সমাজ বা সম্প্রদায়ের চাপ সেই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না— এটাই দিল্লি হাই কোর্টের স্পষ্ট বার্তা।


