১৯৮৪ সালে দিল্লির শিখবিরোধী দাঙ্গায় দু’জন শিখকে হত্যার ঘটনায় কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এটি তাঁর দ্বিতীয় যাবজ্জীবন সাজা, কারণ তিনি ইতিমধ্যেই দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট দাঙ্গার আরেকটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও সজ্জন কুমারকে দাঙ্গার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ ধারায় দুই বছর, প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ দাঙ্গার জন্য ১৪৮ ধারায় তিন বছর এবং গুরুতর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৩০৮ ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড ও জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত রায়ে বলেছে, ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির সরস্বতী বিহার এলাকায় জসবন্ত সিং ও তাঁর ছেলে তরুণদীপ সিংকে হত্যার জন্য কুমার জনতাকে উসকানি দিয়েছিলেন। শুনানির সময় প্রসিকিউশন জানায়, কুমারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী উন্মত্ত জনতা শিখদের সম্পত্তি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
এই মামলা ১৯৮৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে হত্যার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া শিখবিরোধী দাঙ্গার অংশ।
রায়ের পর শিখ নেতা গুরলাদ সিং বলেন, “আমরা মৃত্যুদণ্ডের চেয়ে কম কিছুই মানতে পারব না। এই রায়ে আমরা খুশি নই। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব যাতে উচ্চ আদালতে গিয়ে সজ্জন কুমারের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়।”
এর আগে সজ্জন কুমারের জন্য মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়েছিল মামলাকারী তথা যশবন্তের স্ত্রী এবং রাষ্ট্রের তরফে। আদালতে তারা যুক্তি দেয়, এই মামলা নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটির চেয়েও গুরুতর, কারণ এটি একটি গোটা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ।
আবেদনকারীদের তরফে জানায়, “এই মামলা নির্ভয়া কাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ। নির্ভয়ার ঘটনায় একজন তরুণীকে টার্গেট করা হয়েছিল, কিন্তু এখানে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর হামলা হয়েছে।”
তাদের বক্তব্য, সজ্জন কুমারের অপরাধ ‘বিরলতম মধ্যে বিরল’ (rarest of rare) হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড।
আবেদনকারীদের মতে, এই দাঙ্গা শুধু হত্যাকাণ্ড ছিল না, এটি ছিল একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা। দাঙ্গার ফলে শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ বাসস্থান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন, তাদের জীবন ও জীবিকা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা আরও জানায়, এই ধরনের অপরাধ সমাজের বিশ্বাস ও সম্প্রীতিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।
সজ্জন কুমার, যিনি তখন সংসদ সদস্য ছিলেন, শুধু দাঙ্গা প্রতিরোধে ব্যর্থই হননি, বরং তিনি নিজেই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে উপেক্ষা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।