Home খবর দেশ কোকরাঝারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বড়ো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল মালগাড়ি

কোকরাঝারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বড়ো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল মালগাড়ি

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অরূপ চক্রবর্তী

গুয়াহাটি: এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল কোকরাঝার। বুধবার গভীর রাতে শহরের উপকণ্ঠে শিংগিমারি এলাকায় রেললাইনে সন্দেহভাজন আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনা কাঁপিয়ে দেয় গোটা জেলা। কোকরাঝার রেলস্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে উজনিমুখী রেলপথে এই বিস্ফোরণ ঘটে, যার তীব্রতায় ছিটকে পড়ে রেললাইন এবং ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বৈদ্যুতিক সংযোগের তার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উজনিমুখী আজারা সুগার নামে একটি মালগাড়ি ওই রেলপথ দিয়ে অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরই প্রবল শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। অল্পের জন্যই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। ট্রেনচালক হঠাৎ এক তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করে সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। পরিদর্শনে রেলকর্মীরা দেখতে পান, ট্র্যাক ও স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আশপাশে মাটিতে বিস্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট।

ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছোন আইজিপি বিবেক রাজ সিং, কোকরাঝার জেলার পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিং এবং রেল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেন এবং তদন্তের প্রাথমিক দিকনির্দেশ দেন। ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয় স্নিফার ডগ, যাতে বিস্ফোরকটির উৎস ও প্রকৃতি চিহ্নিত করা যায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা হতে পারে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কোকরাঝার বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লরেন্স ইশলারিও। তিনি বলেন, “এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। এমন ঘটনা এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

অন্য দিকে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের (এনএফ রেলওয়ে) মুখপাত্র জানান, “বুধবার রাত প্রায় ১টার সময় চালাকাটি ও কোকরাঝারের মধ্যবর্তী রেলপথ দিয়ে মালগাড়িটি অতিক্রম করছিল। ট্রেনচালক প্রবল ঝাঁকুনি অনুভব করলে ট্রেন থামানো হয়। পরে দেখা যায়, সন্দেহভাজন বিস্ফোরণের কারণে ট্র্যাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতভর মেরামতির কাজ চলে এবং ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।”

বিস্ফোরণের তীব্রতায় রেললাইন বেঁকে যায় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে কোকরাঝার–চালাকাটি রেলপথে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়। ওই অংশ দিয়ে চলাচলকারী অন্তত আটটি ট্রেনকে স্থগিত রাখতে হয় বলে রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

ঘটনার পরপরই পুলিশ, রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। সন্দেহভাজন আইইডি বিস্ফোরণের পেছনে কোনো সংগঠিত নাশকতামূলক চক্র জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, আশপাশের এলাকাগুলিতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে এবং নিরাপত্তা টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।

রেলকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটার সময় এলাকাটিতে তীব্র শব্দ হয় এবং বিস্ফোরণের অভিঘাতে আশপাশের গ্রামগুলির ঘরবাড়িও কেঁপে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাদের অনেকে জানিয়েছেন, কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাঁরা ভেবেছিলেন ভূমিকম্প হয়েছে।

তদন্তকারী সংস্থাগুলি ধারণা করছে, বিস্ফোরণটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে যাতে রেল চলাচল ব্যাহত করা যায় বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়। তবে সৌভাগ্যক্রমে বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট আগেই ট্রেনটি সেই স্থান অতিক্রম করে, ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা এড়ানো গিয়েছে।

প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা রোধে রেলপথে রাতের টহল বৃদ্ধি করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলিতে সিসিটিভি নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্যও গুরুত্বসহকারে যাচাই করা হচ্ছে।

রেলওয়ে ও রাজ্য পুলিশের যৌথ তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, বিস্ফোরণটি উচ্চক্ষমতার স্থানীয়ভাবে তৈরি আইইডি ডিভাইসের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।

অঞ্চলে বর্তমানে চরম নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণস্থলের আশপাশে টহল অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, “ঘটনাটি গুরুতর হলেও পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।”

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version