Home খবর দেশ ‘ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই’, রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য ভারতের ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষ...

‘ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই’, রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য ভারতের ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর জন্য কতটা ক্ষতিকর

0

লোকসভায় বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রায়শই বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন। এ ধরনের বিতর্ক তাঁর রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বোঝাপড়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। গত দুই দশকে তাঁর অনেক মন্তব্যই নৈরাশ্যজনক বা অপরিণত বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য— “আমরা বিজেপি, আরএসএস এবং ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই লড়ছি”- এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি এটিকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংগ্রাম হিসেবে না দেখে এক বৃহত্তর লড়াই বলে অভিহিত করেছেন, যা তাঁর উদ্দেশ্য ও মতাদর্শ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সরলতা নাকি কৌশলগত উসকানি?

বিজেপির দাবি, রাহুল গান্ধীর ভাষার ধরন ক্রমশ মাওবাদী বাগাড়ম্বরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, যা তাঁর কৌশলগত অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে। একজন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি হয়ে এমন মন্তব্য করা রাষ্ট্রের অখণ্ডতার প্রতি চরম অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। এটি কোনও হঠাৎ করে বলে ফেলা কথা নয়, বরং সচেতন কৌশল বলে মনে হচ্ছে। অতীতে তাঁর মন্তব্যকে যদি অজ্ঞতা বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত, এখন তা আর সম্ভব নয়।

ভারতকে ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে মানতে অস্বীকার?

রাহুল গান্ধী বলেছেন, “ভারত কোনও দেশ নয়, এটি শুধু বিভিন্ন রাজ্যের একটি সংযোগ মাত্র।” তাঁর এই বক্তব্য ভারতের জাতীয়তাবাদের মৌলিক ধারণাকে আঘাত করে, যা তিনি বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর ‘ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই’ করার মন্তব্য তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের অস্তিত্বের ওপর আক্রমণ?

ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করে রাহুল গান্ধী পরোক্ষ ভাবে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও সংবিধানকেই আক্রমণ করেছেন বলে ধারণা অনেকের। তাঁর এমন বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতির ওপর সরাসরি আঘাত হানে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের ভিত্তিকে দুর্বল করতে পারে।

সংবিধানকে অগ্রাহ্য করা?

ভারতীয় সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, ‘ভারতীয় রাষ্ট্র’ বলতে দেশের সমস্ত আইনসভা ও নির্বাহী সংস্থাগুলিকে বোঝানো হয়— যেমন সংসদ, বিধানসভা ও স্থানীয় প্রশাসন। তাই ‘ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই’ ঘোষণার অর্থই হচ্ছে লোকসভা থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করা, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করতে পারে।

পুরনো বিতর্কের ছায়া

এর আগে একাধিক বার বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে এসেছেন রাহুল গান্ধী। এর আগে ইউপিএ সরকার চলাকালীন তিনি প্রকাশ্যে মন্ত্রিসভার একটি সিদ্ধান্তের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এছাড়াও, চিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর গোপন বৈঠক বা বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এসব ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আরও বেড়েছে।

বিতর্কিত সংযোগ ও উদ্দেশ্য?

মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রাহুল গান্ধীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংযোগও সন্দেহজনক। তিনি একাধিকবার এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যাঁরা ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সিআইএ-র সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বৈঠক এবং সোমালি-আমেরিকান রাজনীতিবিদ ইলহান ওমরের মতো ভারতবিরোধী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আরও প্রশ্ন তুলছে।

ভারতের ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য হুমকি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাহুল গান্ধীর মন্তব্য শুধু ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, পাশাপাশি সরাসরি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধেও কাজ করছে। তাঁর বক্তব্য জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা ভারতবিরোধী শক্তিগুলিকে আরও উসকে দিতে পারে।

উত্তরের প্রয়োজন

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ‘ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই’ করার ডাক দেওয়ার পর রাহুল গান্ধীকে এখন পুরো দেশের সামনে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। কেন তিনি এমন মন্তব্য করছেন, যখন তাঁর পরিবার ভারতের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে আসীন ছিল? যখন দেশ একতার পথে এগোচ্ছে, তখন তিনি কেন বিভাজনের রাজনীতি করছেন? শুধু তাই নয়, তাঁর এ ধরনের মন্তব্য কংগ্রেসের ঐতিহ্যকেও কলঙ্কিত করছে।

প্রতিবেদন সূত্র: ওয়ানইন্ডিয়া

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version