Home খবর দেশ হোলি: বসন্তের রঙে রাঙানো পরম্পরা

হোলি: বসন্তের রঙে রাঙানো পরম্পরা

0

শীত বিদায়ের পর নবীন বসন্তের আবাহন ঘটে ফাগুনের বাতাসে। যেমন বৃক্ষের শুকনো ডালপালা নতুন সবুজে সজীব হয়ে ওঠে, তেমনই ফাগুন পূর্ণিমার দোল উৎসবের মাধ্যমে শুরু হয় আবির রাঙা বসন্ত।

দোল উৎসবের উৎস ও ইতিহাস

দোল উৎসবের শিকড় বহু প্রাচীন। চতুর্থ শতাব্দীর কবিতায় এই উৎসব পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থেও এর কথা বলা হয়েছে। এই উৎসবের উৎপত্তি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা থাকলেও প্রধান দুটি কাহিনি বিশেষ জনপ্রিয়— হোলিকা দহন ও রাধা-কৃষ্ণের রঙ খেলা।

হোলিকা দহন: অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয়ের প্রতীক

কথিত রয়েছে, প্রাচীন কালে হিরণ্যকশিপু নামে এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন, যিনি নিজেকে ঈশ্বর বলে মনে করতেন। তবে তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত। পুত্রের এই বিশ্বাস মেনে নিতে না পেরে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। তিনি তাঁর বোন হোলিকাকে এই কাজের দায়িত্ব দেন।

হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিকুণ্ডে বসেন, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পান, আর হোলিকা দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে ফাগুন পূর্ণিমার আগের রাতে ‘হোলিকা দহন’ বা বাংলায় ‘ন্যাড়া পোড়ার’ প্রচলন শুরু হয়, যা দুষ্টের দমন ও সত্যের প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

রাধা-কৃষ্ণ ও দোল খেলা

দোল উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার সঙ্গে যুক্ত। কথিত আছে, কৃষ্ণের গায়ের রং ছিল শ্যামবর্ণ, আর রাধা ছিলেন গৌরবর্ণ। কৃষ্ণ একদিন কৌতূহলবশত যশোদাকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তাঁর গায়ের রং রাধার মতো উজ্জ্বল নয়। যশোদা হাসতে হাসতে পরামর্শ দেন, কৃষ্ণ যেন রাধার গায়ে রঙ মাখিয়ে দেন। সেই থেকেই দোল খেলার শুরু। ব্রজভূমিতে এই উৎসব ‘বসন্ত উৎসব’ নামে পরিচিত, যেখানে প্রেম ও অনাবিল আনন্দের প্রতিফলন ঘটে।

দোল উৎসবের বৈজ্ঞানিক দিক

দোল উৎসবের সঙ্গে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও জড়িত। বসন্ত ঋতু শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যবর্তী সময়, যখন আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। হোলিকা দহনের আগুনের উচ্চ তাপমাত্রা (৫০-৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বাতাসের ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।

কিছু অঞ্চলে হোলিকা দহনের ছাই কপালে মাখার প্রচলন আছে, যা চন্দনের সঙ্গে মিশিয়ে সংক্রামক প্রতিরোধী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, আমের মুকুল খাওয়ার রীতিও রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

উৎসবের আনন্দে রঙিন হোন

দোল শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি উৎসবের রঙে মিশে যাওয়া, বৈষম্য ভুলে একত্রে আনন্দ করার প্রতীক। তাই দোলের দিন আনন্দে ভেসে যান, রঙিন মুহূর্ত উপভোগ করুন, আর উৎসবের আমেজে থাকুন আনন্দে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version