খবর অনলাইন ডেস্ক: আবার এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কীর্তি! এক ধর্মগুরু ভোলে বাবার সৎসঙ্গে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন শতাধিক সাধারণ মানুষ। আর-এক ধর্মগুরু হিমালয়ের গহন কন্দরে বেআইনিভাবে মন্দির বানিয়ে হইচই ফেলে দিলেন। ইনি বাবা যোগী চৈতন্য আকাশ।
বাবা যোগী চৈতন্য আকাশ মন্দির তৈরি করেছেন পরিবেশগত দিক থেকে হিমালয়ের অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গায়, ৫০০০ মিটার তথা সাড়ে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতার সুন্দরডুঙ্গা হিমবাহ অঞ্চলে। তাঁর দাবি, ঈশ্বরের নির্দেশেই তিনি এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছেন। এই খবর দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের সরকারি আধিকারিকরা।
ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করার জন্য উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার প্রশাসন রাজস্ব, বন এবং পুলিশ দফতরের কর্মীদের নিয়ে একটি যৌথ টিম বানিয়েছে। কাপকোটের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট অনুরাগ আর্য জানিয়েছেন, বর্ষার পরে ওই তদন্তদল ট্রেক করে ওই দুর্গম এলাকায় যাবে। কারণ, বর্ষায় ওই অঞ্চলে ট্রেক করে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
যেখানে মন্দির তৈরি করা হয়েছে সেখান থেকে ৩৮ কিমি দূরে বাদিয়াকোট গ্রামের কিছু বাসিন্দা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বাবা যোগী চৈতন্য আকাশ সম্পর্কে অভিযোগ করেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, মন্দিরের কাছে যে জলাশয় রয়েছে সেখানে স্নান করে ওই ‘বাবা’ ওই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের প্রথা তথা ঐতিহ্য লঙ্ঘন করেছেন।
অনুরাগ আর্য জানান, “বর্ষার খামখেয়ালি আচরণের জন্য প্রতি বছর ১৫ জুনের পরে হিমালয়ের ওই অঞ্চলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র বন দফতর পারমিট ইস্যু করতে পারে। সোমবার বাদিয়াকোট গ্রামের কিছু বাসিন্দা সুন্দরডুঙ্গা হিমবাহ অঞ্চলে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। ওই মন্দির দেবী ভগবতীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।”
“গ্রামবাসীর আরও দাবি, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে বাবা দেবীকুণ্ডে স্নান করেছেন। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, সেপ্টেম্বরে নন্দ অষ্টমী মেলার সময়ে দেবী যাঁদের আদেশ দেন একমাত্র তাঁরাই দেবীকুণ্ডে স্নান করতে পারেন”, বলেন মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট।
স্থানীয় গ্রামবাসী মহেন্দ্র সিং ধামি ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে বলেন, “মন্দির বানানোর কাজে তাঁর পাশে থাকার জন্য বাবা গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে বলেন। তিনি বলেন দেবী ভগবতী তাঁর স্বপ্নে এসেছিলেন এবং দেবী কুণ্ডে মন্দির বানানোর নির্দেশ তিনিই দিয়েছেন। তীর্থযাত্রী আর স্থানীয় মানুষদের কাছে পবিত্র এই জলাশয় এখন কার্যত ওঁর সুইমিং পুলে পরিণত হয়েছে। এখন উনি যা বলবেন, তা-ই হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, “আমরা যা খবর পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৫ জুনের আগেই এই মন্দির তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন দফতরকে না জানিয়ে বাবা কীভাবে মন্দির নির্মাণের কাঁচামাল ওই জায়গায় নিয়ে গেলেন সেটাই আমাদের জানতে হবে। আর স্থানীয় মানুষরা কেন ওই মন্দির নির্মাণ করতে দিলেন এবং কেন তাঁরা এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আগে অবহিত করলেন না সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা বাবা যোগী চৈতন্য আকাশকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।”
স্থানীয় পাটোয়ারি সঞ্জয় সিং জানান, ওই জায়গায় ট্রেক করে পৌঁছোতে দু’ দিন লাগে। “আমাদের নির্দেশ দিলে আমরাও ওই মন্দির সরিয়ে দিতে পারি।”
আরও পড়ুন
নীতীশ ও তেজস্বীর টেনশন বাড়ালেন মায়াবতী! বিধানসভা নির্বাচনে ‘খেলা’র প্রস্তুতি বিহারে