Home খবর দেশ আইআইটি খড়গপুরে ফের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু, ৭ মাসে ৪ ছাত্রের প্রাণহানি

আইআইটি খড়গপুরে ফের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু, ৭ মাসে ৪ ছাত্রের প্রাণহানি

ফের অস্বাভাবিক মৃত্যু আইআইটি খড়গপুরে। RP হলের ঘর থেকে উদ্ধার ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ঋতম মণ্ডলের ঝুলন্ত দেহ। গত ৭ মাসে এটি চতুর্থ ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা।

IIT Khargpur
আইআইটি খড়্গপুরে ফের ছাত্র মৃত্যু

আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে ফের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল। শুক্রবার সকালে রাজেন্দ্র প্রসাদ (RP) হলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় ৪র্থ বর্ষের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ঋতম মণ্ডলের (২১) ঝুলন্ত দেহ। এই নিয়ে গত সাত মাসে আইআইটি খড়গপুরে চারজন ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঋতম কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন এবং RP হলের ২০৩ নম্বর ঘরে থাকতেন। সকাল থেকে তাঁর সাড়া না পেয়ে বন্ধুরা প্রথমে ডেকে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও সাড়া না মেলায় তাঁরা হস্টেল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। এরপর হিজলি থানার পুলিশ ও ক্যাম্পাস সিকিউরিটি দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে এবং ঋতমের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ক্যাম্পাসের BC Roy হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

হিজলি থানার এক আধিকারিক জানান, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে, তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’’ মৃতদেহের অটোপসি ভিডিওগ্রাফি করে করা হবে এবং পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এই ঘটনার আগে গত কয়েক মাসে আরও তিন ছাত্রের মৃত্যুতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল আইআইটি খড়গপুরে।

  • ১২ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেন তৃতীয় বর্ষের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র শাওন মালিক।
  • ২০ এপ্রিল ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় চূড়ান্ত বর্ষের ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র অনিকেত ওয়াকারের দেহ।
  • ৪ মে বিহারের মহম্মদ আসিফ কামের মৃত্যু হয় মদন মোহন মালব্য হলে।

২০২২ সালের অক্টোবরে ঘটে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অসমের ছাত্র ফাইজান আহমেদের মৃত্যু আত্মহত্যা বলা হলেও, পরবর্তী ময়নাতদন্তে তাঁর দেহে গুলির চিহ্ন ও ছুরির আঘাত পাওয়া যায়। আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করলে এই তথ্য সামনে আসে। ফলে তা খুনের মামলা হিসেবে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়।

এই ঘটনার পরই আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য টাস্কফোর্স  গঠন করে। মনোবিদ, আইনজীবী, পুলিশ, শিক্ষক ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে পরামর্শ দেবে কীভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যাম্পাস পরিবেশ উন্নত করা যায়।

সেই সঙ্গে চালু হয়েছে “ক্যাম্পাস মাদার্স” নামে একটি নতুন প্রকল্প, যেখানে মহিলা শিক্ষক ও কর্মীরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে মানসিক সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

তবু বিশেষজ্ঞদের মতে, এইসব পদক্ষেপ অধিকাংশই কোনও ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে নেওয়া হয়। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই। বহু ছাত্র সংগঠন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন— একমাত্র স্থায়ী সংস্কার, সহানুভূতিপূর্ণ ক্যাম্পাস সংস্কৃতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিনিয়োগই পারে এই মৃত্যু রুখতে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের আইআইগুলিতে আত্মহত্যার সংখ্যা ১২৭। তার মধ্যে আইআইটি মাদ্রাজে সর্বাধিক ২৬ জন, আইআইটি কানপুরে ১৮ জন, আইআইটি খড়গপুরে ১৪ জন এবং আইআইটি গৌহাটিতে ১৩ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাপ, নিঃসঙ্গতা, সম্পর্কের জটিলতা, জাতিগত বৈষম্য, কেরিয়ার অনিশ্চয়তা ইত্যাদি কারণগুলি এই আত্মহত্যার পেছনে কাজ করে।

আরও পড়ুন: সকাল ৯টা থেকে ১১ টা মিছিল নয়, ২১ জুলাই শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কড়া নির্দেশ হাই কোর্টের

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version