ইডেন গার্ডেন্সে রবিবার যেন দু’টি আলাদা ম্যাচ দেখা গেল—একদিকে টেম্বা বাভুমার ধৈর্য, অন্যদিকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভেঙে পড়া স্নায়ু। লক্ষ্য মাত্র ১২৪। এমন রান সাধারণ পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য নেহাতই সহজ। কিন্তু ইডেনের ঘূর্ণি-সহায়ক পিচে সেই লক্ষ্যই হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর। চতুর্থ ইনিংসের বাস্তবতা বুঝেছিলেন চেতেশ্বর পুজারা; ম্যাচের আগেই তিনি বলেছিলেন, এই পিচে ১২০ রানও কঠিন হবে। তাঁর মন্তব্যই শেষ পর্যন্ত সত্যি প্রমাণিত হল।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছিল ১৫৩ রানে। কিন্তু সেই সংক্ষিপ্ত সংগ্রহের মধ্যেও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। চোট সারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করে বাভুমা খেললেন ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস—১৩৬ বলের ধৈর্য, শুদ্ধ রক্ষণ, শক্ত প্রতিরোধে তিনি দলের সংগ্রহকে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে যান। ইডেনের এই টেস্টে তিনিই একমাত্র ব্যাটার যিনি অর্ধশতরান করেছেন। করবিন বসও (২৫) কিছুটা সঙ্গ দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বাকিরা দ্রুত ফিরেছেন।
ভারতের ব্যাটিংয়ে সেই লড়াইয়ের ছায়াও দেখা গেল না। ওয়াশিংটন সুন্দর (৩১) ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারলেন না প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। প্রথম ওভারেই মার্কো জানসেন ফিরিয়ে দেন যশস্বী জয়সওয়ালকে (০)। তৃতীয় ওভারে লোকেশ রাহুলও (১) ফিরে যান। শুরুতেই ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন ওয়াশিংটন ও ধ্রুব জুরেল, কিন্তু থিতু হওয়ার পর জুরেল অযথা ছক্কা মারতে গিয়ে সাইমন হারমারের বলেই আউট হন (১৩)। একই বোলারের বলে একই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ঋষভ পন্থ (২)। জাডেজার দ্রুত ১৮ রানও ভারতকে উদ্ধার করতে পারেনি।
ইডেনের ২২ গজে ভারতে সবচেয়ে বেশি বিপদ তৈরি করেছেন সাইমন হারমার। প্রথম ইনিংসের পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ৪ উইকেট নেন মাত্র ২১ রানে। মার্কো জানসেন নেন ২ উইকেট (১৫ রান), কেশব মহারাজ নেন আরও ২টি (৩৭ রান)। ভারতের ব্যাটাররা প্রোটিয়া স্পিন সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন বারবার। গত বছর স্পিনিং ট্র্যাকে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ হারের মতোই আবারও দেখা গেল বিপর্যয়। গম্ভীরের কোচিংয়ে প্রথম সিরিজ়েই ভারতের সিরিজ় জয়ের সুযোগ শেষ। গুয়াহাটি টেস্টে জিতলেও সর্বোচ্চ সিরিজ় ড্র করা সম্ভব।
ইডেনের পিচ একা দায়ী? নাকি প্রস্তুতিতে ঘাটতি? প্রশ্ন এখন গম্ভীর ও ভারতীয় দলের সামনে—এই ধাক্কা থেকে কত দ্রুত শিক্ষা নিতে পারে দল।
