নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে কানাডার মন্ত্রীর করা অভিযোগকে “অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। শুক্রবার কানাডিয়ান হাই কমিশনের একজন প্রতিনিধিকে তলব করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা কানাডিয়ান হাই কমিশনের প্রতিনিধিকে তলব করে কড়া ভাষায় জানিয়েছি যে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে কানাডিয়ার উপমন্ত্রী ডেভিড মরিসন যে ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক মন্তব্য করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে নিন্দনীয়।”
সম্প্রতি জাস্টিন ট্রুডো-নেতৃত্বাধীন কানাডা সরকারের দুই ঊর্ধ্বতন আধিকারিক স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা এবং সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করেছেন। কানাডিয়ান পুলিশের অভিযোগ, খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। কানাডিয়ান উপমন্ত্রী ডেভিড মরিসন কানাডিয়ান সংসদের এক কমিটিতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত।
ভারত এই অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এটি ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এবং অন্যান্য দেশকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
বিদেশমন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “কানাডার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভিত্তিহীন তথ্য ফাঁস করার কৌশল, বর্তমান কানাডা সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং আচরণ সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘদিনের সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে।”
গত বছর হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগের পর থেকেই ভারত ও কানাডার সম্পর্ক অবনতির পথে। শনিবার কেন্দ্র জানায়, “এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলবে।”
ভারতের দূতাবাস আধিকারিকদের উপর নজরদারি
কানাডায় ভারতীয় কনস্যুলার কর্মকর্তাদের উপর নজরদারি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। কানাডার সরকারকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, কানাডা সরকারের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছে।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, “আমাদের কিছু কনস্যুলার কর্মকর্তাকে সম্প্রতি কানাডা সরকার অবহিত করেছে যে, তাদের উপর অডিও ও ভিডিও নজরদারি চালানো হয়েছে এবং তাঁদের যোগাযোগও আটকানো হয়েছে। আমরা এই কাজগুলিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রোটোকলের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করি এবং এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, কানাডা সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ‘উৎপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শন’ ছাড়া কিছুই নয়, যা কূটনৈতিক আদর্শ এবং চর্চার পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, “কানাডা সরকার প্রযুক্তিগত কারণ উল্লেখ করে এই উৎপীড়নকে ন্যায়সঙ্গত করতে পারে না। আমাদের কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই উগ্রতা ও সহিংসতার পরিবেশে কাজ করছেন। কানাডা সরকারের এই পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে এবং কূটনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী”।