রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) জন্য স্বস্তির খবর—জুলাই মাসে দেশের খুচরো মূল্যসূচক বা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) নেমে দাঁড়িয়েছে ১.৫৫ শতাংশে। মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের (MoSPI) তথ্য অনুযায়ী, এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং বর্তমান সিপিআই সিরিজে দ্বিতীয়-সর্বনিম্ন রেকর্ড। এর আগে ২০১৭ সালের জুনে এই হার ছিল ১.৪৬ শতাংশ।
খাদ্যদ্রব্যের দামে বার্ষিক ভিত্তিতে বড় পতন এবং অনুকূল বেস ইফেক্ট এই পতনের প্রধান কারণ। জুনে সিপিআই ছিল ২.১ শতাংশ। টানা নবম মাসে সিপিআই কমেছে এবং এবার প্রথমবার ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর আরবিআইয়ের ২-৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নীচে নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিস্থিতি সুদের হার আরও কমানোর সুযোগ তৈরি করতে পারে।
কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি নেমে হয়েছে ১.৭৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। সবজির দাম বছরে তুলনায় ২০.৬৯ শতাংশ কমেছে, যদিও মাসিক হিসাবে (জুন থেকে জুলাই) সবজির দাম ১১.৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ফলের দাম বেড়েছে ২.৮ শতাংশ। ভোজ্য তেল (২ শতাংশ) ও ডিমের (১.৮ শতাংশ) দামও মাসিক ভিত্তিতে বেড়েছে।
অ-খাদ্য পণ্যের মধ্যে মাসিক মূল্যবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। পোশাক ও জুতোর দাম বেড়েছে ০.২ শতাংশ, বাড়িভাড়ায় বৃদ্ধি ০.৫ শতাংশ, জ্বালানির দাম সামান্য কমেছে ০.১ শতাংশ।
গ্রামীণ অঞ্চলে জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে দাঁড়িয়েছে ১.১৮ শতাংশে—এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। শহুরে এলাকায় এই হার ২.০৫ শতাংশ, যা ইতিহাসে দ্বিতীয়-সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো বৃষ্টিপাতের ফলে গ্রামীণ চাহিদা বাড়ছে এবং তা দেশের অর্থনীতিকে বাড়তি গতি দেবে।
মূল্যবৃদ্ধির এই পতনের সঙ্গে সঙ্গেই মূল মুদ্রস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি বাদে) জুলাইয়ে নেমে এসেছে ৪.১ শতাংশে, যা জুনে ছিল ৪.৪ শতাংশ। ‘শিক্ষা’ ও ‘ব্যক্তিগত যত্ন’-এর মতো ক্ষেত্রে দামের ধীরগতি কোর ইনফ্লেশন কমাতে সহায়ক হয়েছে। তবে সোনার দামের ধারাবাহিক বৃদ্ধি এখনও কোর ইনফ্লেশনে চাপ সৃষ্টি করছে—জুলাইয়ে সোনার দাম বার্ষিক ভিত্তিতে ৩৬ শতাংশ বেশি ছিল।
তবে সাধারণ ক্রেতার মতে, সরকার তথ্য সঙ্গে বাস্তবটা বিস্তর ফারাক। সবজির বাজারে গেলে দামের আগুনে ছেঁকা লাগছে হাতে। আলুর দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ সহ অন্যান্য সবজির দাম প্রায় আকাশ ছোঁয়া। বর্ষার অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। গত জুন মাস থেকেই এই দাম বাড়তে শুরু করেছে।
যদিও কেন্দ্রের এই তথ্য-পরিসংখ্যান গত কয়েক মাসের। সেই সমময় কিছুটা হলেও বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে ছিল।