ভারতের নতুন ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ নিয়ে বিতর্ক চললেও, ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র ভারতের বিষয় নয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতেও ওয়াকফের জন্য আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো বিদ্যমান। জেনে নিন কেমন সেই কাঠামো।
ওয়াকফ কী?
ওয়াকফ হল ইসলাম ধর্মে একটি চিরস্থায়ী দান, যা সাধারণত ধর্মীয়, শিক্ষামূলক বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে সম্পত্তি উৎসর্গের মাধ্যমে গঠিত হয়। এই সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
ভারতের নতুন ওয়াকফ আইন: মূল বৈশিষ্ট্য
ভারতের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে:
- অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি: কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে দুইজন অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। Press Information Bureau
- “ওয়াকফ বাই ইউজার” বাতিল: ব্যবহার ভিত্তিক ওয়াকফের ধারণা ভবিষ্যতের জন্য বাতিল করা হয়েছে।
- আদালতের অধিকার বৃদ্ধি: ওয়াকফ সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।
- প্রতিনিধিত্বের সম্প্রসারণ: শিয়া, সুন্নি, বোহরা, আগাখানি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা
সৌদি আরব, জর্ডান, তুরস্ক, ইরান, ওমান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও বাহরাইনসহ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ওয়াকফ ব্যবস্থাপনার জন্য আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো বিদ্যমান।
- সৌদি আরব: ওয়াকফ সম্পত্তি শুধুমাত্র মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
- জর্ডান: ওয়াকফ বিষয়ক বিচারিক ক্ষমতা ধর্মীয় আদালতের অধীনে।
- তুরস্ক: সরকারি প্রতিষ্ঠান “ভাকিফলার জেনেল মুদুরলুগু” ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করে।
- ইরান ও ওমান: কিছু ক্ষেত্রে অ-মুসলিমদের ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
ভারতের নতুন ওয়াকফ আইন নিয়ে সমালোচনার মূল কারণগুলি হল:
- অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি: অনেকে মনে করেন, এটি ইসলামী ধর্মীয় নীতির পরিপন্থী।
- “ওয়াকফ বাই ইউজার” বাতিল: অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ ও দরগাহ, যেগুলির আনুষ্ঠানিক নথি নেই, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
- সরকারি হস্তক্ষেপ: কিছু মুসলিম সংগঠন মনে করেন, এই আইন মুসলিম সম্পত্তির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা।
ভারতের নতুন ওয়াকফ আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে অনেকাংশে সঙ্গতিপূর্ণ হলেও, কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিতর্কের মূলে রয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার ও সংবিধানিক নীতির প্রশ্ন।
ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা: ভারত বনাম মুসলিম দেশগুলি
(তথ্যসূত্র: ভারত সরকারের প্রকাশিত ফ্যাক্টশিট)
✅ যেসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান:
- ওয়াকফ পরিচালনার জন্য আইন রয়েছে
→ ভারত, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক, ওমান, ইরান, কুয়েত, UAE, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বাহরাইন — সব দেশেই। - পরিচালনাকারী বোর্ড/ট্রাইব্যুনাল রয়েছে
→ সব দেশেই রয়েছে। - কেন্দ্রীভূত তথ্যভান্ডার ও অনলাইন পোর্টাল রয়েছে
→ ভারত, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, কুয়েত, UAE, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বাহরাইন
→ ওমানে নেই - সরকারি তদারকি বিদ্যমান
→ সব দেশেই রয়েছে। - সমীক্ষা ও নথিভুক্তকরণ ব্যবস্থা রয়েছে
→ ভারত, সৌদি আরব, ওমান, ইরান, UAE, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বাহরাইন
→ কাতার ও তুরস্কে নেই - বিক্রি বা অপব্যবহার রোধে আইনি বাধা রয়েছে
→ সব দেশেই রয়েছে। - আর্থিক স্বচ্ছতা ও নিরীক্ষার বিধান রয়েছে
→ ভারত, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, কুয়েত, UAE, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বাহরাইন
→ ওমানে নেই - সম্প্রদায়ভিত্তিক ওয়াকফ বোর্ড (যেমন শিয়া, সুন্নি, বোহরা প্রভৃতি)
→ কেবল ভারতে রয়েছে। - অরহত্যাযোগ্যতা (Irrevocability) অর্থাৎ একবার দান করলে আর ফেরত নেওয়া যায় না
→ সব দেশেই রয়েছে। - বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার সুযোগ
→ ভারত, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক, ওমান, ইরান
→ কুয়েত, UAE, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বাহরাইনে নেই - অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি
→ কেবল ভারতে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্তির বিধান রয়েছে
→ তুরস্ক, ইরান ও ওমানে কিছু ক্ষেত্রে আংশিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি রয়েছে
→ অন্য কোনও দেশে নেই।