খোলা আকাশের নিচে, ঠান্ডা মাটিকে আঁকড়ে তিন দিনের এক নবজাতক লড়ছিল জীবনের জন্য। পিঁপড়ের কামড়, ঠান্ডায় কাঁপুনি, শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা— সব সয়ে অবশেষে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল সে। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলার নন্দনওয়াড়ি অরণ্যে।
ভোরে বন থেকে ভেসে আসা কান্নার শব্দে সতর্ক হন গ্রামবাসীরা। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কোনও পশুর ডাক। কাছে গিয়ে দেখেন, পাথরের নিচে চাপা পড়া এক রক্তাক্ত, কাঁপতে থাকা নবজাতক। সঙ্গে সঙ্গেই পাথর সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির বাবা বাবলু দণ্ডোলিয়া, পেশায় সরকারি স্কুলশিক্ষক, এবং মা রাজকুমারী দণ্ডোলিয়া। তাঁদের ইতিমধ্যেই তিন সন্তান রয়েছে। সরকারি চাকরিতে দুই সন্তানের বেশি থাকলে চাকরি হারানোর ভয় থেকে এই সন্তান জন্মের খবর তাঁরা গোপন রাখেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজকুমারী বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁরা শিশুটিকে বনে নিয়ে গিয়ে পাথরের নিচে চাপা দিয়ে ফেলে আসেন।
অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল নবজাতক
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির শরীরে পিঁপড়ের কামড়ের দাগ রয়েছে, সঙ্গে হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ। ছিন্দওয়ারা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি আপাতত নিরাপদ। এক শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই অবস্থায় রাতভর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। ওর বেঁচে যাওয়া একেবারে অলৌকিক।”
আইনি ব্যবস্থা
পুলিশ ইতিমধ্যেই বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি (BNS) ধারা ৯৩ (শিশু পরিত্যাগ)-এর মামলা দায়ের করেছে। এসডিওপি কল্যাণী বারকাডে জানিয়েছেন, আরও ধারার (যেমন ১০৯ BNS, হত্যা প্রচেষ্টা) সংযোজনের বিষয়টি আইনিভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বিস্ময়কর তথ্য
এনসিআরবি (NCRB) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি নবজাতক পরিত্যাগের ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশে। সাধারণত দারিদ্র্য, সামাজিক কলঙ্ক, কিংবা অসহায় পরিস্থিতির কারণে এমন ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনার ভয়াবহতা আরও বেশি কারণ এটি ঘটেছে এক শিক্ষিত পরিবারে, যারা দায়িত্ব নেওয়ার বদলে নীরবতা বেছে নিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, “কোনও বাবা-মা এভাবে করতে পারে না। ঈশ্বরের দানকে ফেলে দেওয়া যায় না।”