দুর্নীতি রুখতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কেন্দ্র সরকার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পে (MGNREGA) এনেছিল ন্যাশানল মোবাইল মনিটারিং সিস্টেম National Mobile Monitoring System (NMMS) অ্যাপ। তবে এক বছর যেতে না যেতেই সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ বলেই মেনে নিতে বাধ্য হল কেন্দ্রীয় সরকার।
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তোলা কর্মীদের ছবিতে নানা রকম জালিয়াতি ধরা পড়ায়, এখন সমস্ত আপলোড হওয়া ছবির প্রমাণ যাচাইয়ের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতের ঘাড়ে।
এক চিঠিতে গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের (MoRD) তরফে জানানো হয়েছে, NMMS ব্যবহারের সময় অন্তত সাত ধরনের জালিয়াতির ঘটনা নজরে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, “এইসব গুরুতর অনিয়ম ডিজিটাল ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ণ করছে এবং জনধনের অপচয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
কী ছিল NMMS-এর নিয়ম?
- জানুয়ারি ২০২৩ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয় NMMS অ্যাপ।
- কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির জন্য দিনে দু’বার ছবি তুলতে হতো — একবার কাজ শুরুর সময়, আরেকবার ৪ ঘণ্টা পরে।
- আগে যেখানে ফিজিক্যাল রেজিস্টার ব্যবহার হতো, তা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্যর্থতা স্বীকার
২০২২ সালের মে মাসে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল স্বচ্ছতা বাড়ানোর লক্ষ্যে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে,
- কর্মীদের পুরনো ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে
- একই লোকের ছবি অন্য জায়গায় আবার ব্যবহার হচ্ছে
- কখনও ছবি আপলোডই হচ্ছে না, তবু বেতন যাচ্ছে
এই পরিস্থিতিতে গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি ছবির সত্যতা যাচাই করতে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তকে ‘অবাস্তব ও অব্যবহারযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিভিন্ন এনজিও এবং সমাজকর্মীরা বলছেন, “যে পঞ্চায়েত কর্মীরা দিনে হাজার হাজার কর্মীর কাজ সামলান, তাঁদের পক্ষে প্রতিটি ছবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। বরং রেজিস্টারে উপস্থিতি নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা আবার চালু করা উচিত।”অনেকই বলছেন, ডিজিটালাইজেশনের নামে পুরনো পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নতুন ব্যবস্থাই এবার জনসাধারণের প্রকৃত রোজগারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাঁদের মতে, সরকারে উচিত উপর থেকে না চাপিয়ে দিয়ে বাস্তবের উপর ভিত্তি করেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পদ্ধতি চালু করা।
আরও পড়ুন: বাংলায় কথা বললেই সন্দেহ! নাগরিকত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রকে হলফনামা দিতে বলল হাই কোর্ট