ভারতের কর্পোরেট দুনিয়ায় এক মহীরুহের পতন ঘটল। ৮৬ বছর বয়সে চলে গেলেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা। তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা দেশের শিল্পমহল এবং জনসাধারণের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রতন টাটা, যিনি টাটা গ্রুপকে একটি বিশ্বমানের শিল্প সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন, রেখে গেলেন এক অনন্য উত্তরাধিকার।
রতন টাটা ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব নেন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত সফলভাবে সেটি পরিচালনা করেন। তাঁর নেতৃত্বে টাটা গ্রুপ দেশের অর্থনৈতিক দিগন্তকে পাল্টে দেয়। ২০০৮ সালে ব্রিটেনের জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ড কিনে ভারতকে বিশ্বদরবারে নতুন করে পরিচিত করেছিলেন তিনি।
তবে শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই নয়, রতন টাটার উদ্যোগে ২০০৯ সালে চালু হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি, ‘টাটা ন্যানো’। এটি সারা বিশ্বে মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়ি কেনার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।
শিল্পপতি হিসাবে রতন টাটার কৃতিত্বের পাশাপাশি, তিনি সবসময় সামাজিক দায়িত্ববোধের জন্য পরিচিত ছিলেন। পশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, বিশেষ করে কুকুরদের প্রতি, তাঁকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর বম্বে হাউসকে কুকুরদের জন্য আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছিলেন, যা একটি মানবিক উদ্যোগের প্রতীক হয়ে আছে।
সামাজিক মাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা অসাধারণ ছিল। সমাজমাধ্যমে ১৩ মিলিয়নেরও বেশি অনুগামী নিয়ে তিনি ছিলেন ভারতের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্যোক্তা’। তাঁর পোস্টগুলি প্রায়শই অনুপ্রেরণা এবং মানবিকতার বার্তা বহন করত।
ব্যক্তিগত জীবনে রতন টাটা ছিলেন অবিবাহিত। তবে, তাঁর জীবনে ভালোবাসার গল্প এবং বিয়ে নিয়ে কিছু অসম্পূর্ণ অধ্যায় রয়ে গিয়েছিল। তিনি একবার বলেছিলেন, লস অ্যাঞ্জেলসে কাজ করার সময় প্রেমে পড়েছিলেন, কিন্তু ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের কারণে বিয়ে সম্ভব হয়নি।
রতন টাটা তাঁর অবসরের পরেও বিভিন্ন দাতব্য এবং সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে টাটা ট্রাস্ট দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং গ্রামীণ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে।
রতন টাটা তাঁর কর্মজীবনে দেশের প্রতি অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে পদ্মভূষণ (২০০০) এবং পদ্ম বিভূষণ (২০০৮) সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। ভারত তাঁর মধ্য দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শিল্পপতিকে হারাল।