নারী, শিশু এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে গোটা দেশে একটি অভিন্ন নির্দেশিকা প্রণয়নের আবেদন নিয়ে শুনানি হয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি সুর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভুইঞার বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে সোমবার নোটিস জারি করে জানুয়ারিতে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে।
আবেদনের শুনানিতে প্রবীণ আইনজীবী মহালক্ষ্মী পাওয়ানি, যিনি সুপ্রিম কোর্ট ওমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, জানান যে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও, ছোট শহরগুলিতে ঘটে যাওয়া এমন বহু ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, ওই ঘটনার পরে আরও ৯৫টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা সংবাদমাধ্যমে সেভাবে আসেনি।
পাওয়ানি বলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির মতো অপরাধীদের জন্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নপুংসককরণের মতো শাস্তি চালু হওয়া উচিত। তবে বেঞ্চ এমন প্রস্তাবকে “বর্বর” এবং “অমানবিক” বলে অভিহিত করে জানায়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা গভীর ভাবে পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
বেঞ্চের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে যে, বাস, ট্রেন, মেট্রোর মতো পরিবহণে যাত্রীদের জন্য সঠিক আচরণবিধি থাকা উচিত এবং সেটি কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হওয়া জরুরি। বিচারপতি সুর্য কান্ত বলেন, “এটি শুধু শিক্ষার বিষয় নয়, বরং সঠিকভাবে প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তাও আছে।” বেঞ্চ আরও উল্লেখ করে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিমানেও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, যা এই নির্দেশিকার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে।
আবেদনে নির্ভয়া কাণ্ডের উল্লেখ করা হয়, যেটি ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঘটে। ২৩ বছরের এক ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থীকে দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয়, যার পরে তিনি প্রাণ হারান। পাওয়ানি জানান, কঠোর আইন এবং নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও তাদের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
বেঞ্চ জানায়, “শাস্তিমূলক আইন কার্যকর না হওয়ার জায়গাগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।” বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রালয়গুলিকে নোটিস জারি করতে হবে।
বিচারপতি সুর্য কান্তের মন্তব্য, “আপনারা সাধারণ নারীর জন্য সুরক্ষার আর্জি এনেছেন, যাঁরা দৈনন্দিন জীবনে লড়াই করেন। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”