রাজ্য সরকারগুলো সাশ্রয়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে সাফ জানাল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত জানায়, বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো আরও সুবিধা পেয়েছে এবং প্রসারিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং এনকে সিংয়ের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি করে এ দিন। এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের এবং তাঁদের পরিবারকে বাধ্য করছে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী শুধুমাত্র হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে চড়া দামে কিনতে।
মামলায় দাবি করা হয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এই জবরদস্তি বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশ দেওয়া উচিত। এছাড়া, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করায় রোগীরা শোষণের শিকার হচ্ছেন।
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, “আমরা আপনার সঙ্গে একমত… কিন্তু এটি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?”
আদালত জানায়, জনগণের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করা রাজ্যগুলোর দায়িত্ব।
আদালতের পর্যবেক্ষণ আরও বলা হয়, কিছু রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রসার ও আধিপত্য বেড়েছে। এই রাজ্য সরকারগুলোকে তাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে রোগীদের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী শুধুমাত্র হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে কিনতে বাধ্য করতে না পারে, বিশেষত যখন একই ওষুধ বা সরঞ্জাম বাইরে কম দামে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাগরিকদের শোষণ বন্ধে একটি নির্দেশিকা তৈরি করতে।
তবে, আদালত এটাও উল্লেখ করেছে যে, তারা এই বিষয়ে সরাসরি বাধ্যতামূলক কোনো নির্দেশ দিতে চায় না, তার চেয়ে ভালো রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।
এর আগে এই বিষয়ে আদালত বিভিন্ন রাজ্যকে নোটিস পাঠিয়েছিল। ওড়িশা, অরুণাচলপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, তামিলনাড়ু, হিমাচলপ্রদেশ এবং রাজস্থানসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য আদালতে তাদের লিখিত জবাব জমা দিয়েছে।
ওষুধের দামের বিষয়ে, রাজ্য সরকারগুলো জানায়, তারা কেন্দ্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ আদেশ অনুসরণ করে এবং অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম নির্ধারিত থাকে যাতে তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে।
তারা আরও দাবি করে, সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য “ফেয়ার প্রাইস শপ” তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে সাধারণ মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আদালত বলে, “আমরা উল্লেখ করতে চাই যে অধিকাংশ রাজ্য তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য-সুবিধা কর্মসূচি চালু করেছে, যা ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী এবং চিকিৎসা পরিষেবা সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহের জন্য তৈরি করা হয়েছে।”
এছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারও আদালতে জানিয়েছে যে, রোগীদের হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হয় না।