Home খবর দেশ ভোটার তালিকার ‘বিশেষ’ সংশোধনে আধার, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বিবেচনার নির্দেশ সুপ্রিম...

ভোটার তালিকার ‘বিশেষ’ সংশোধনে আধার, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বিবেচনার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

eci

বিহারে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় পুনর্মূল্যায়ন’ (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া নিয়ে দায়ের হওয়া একগুচ্ছ মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ডকেও এই তালিকায় গ্রহণযোগ্য নথি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ জানায়, নির্বাচন কমিশনের (ECI) ২৪ জুনের নির্দেশে যেসব ১১টি নথি তালিকাভুক্ত ছিল, তা সম্পূর্ণ নয়, বরং শুধুমাত্র দৃষ্টান্তমূলক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, “এই তালিকা যেহেতু সম্পূর্ণ নয়, আমাদের মত অনুযায়ী, ন্যায়ের স্বার্থে ECI-কে আধার কার্ড, ইলেক্টোরাল ফটো আইডি কার্ড এবং রেশন কার্ড বিবেচনায় রাখতে হবে।”

তবে আদালত স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, এই নথির ভিত্তিতে কারও নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য নয়। তা কমিশনের বিবেচনার বিষয়।

আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে ২৮ জুলাই। তার আগে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে পাল্টা হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। পিটিশনকারী পক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, তারা আপাতত কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ চাচ্ছে না, কারণ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের নির্ধারিত তারিখ (১ অগস্ট)-এর আগেই এই শুনানি হবে।

বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, “এই মামলা দেশের গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড, অর্থাৎ ভোটাধিকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে।” তারা তিনটি বিষয়কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন— (১) এই সংশোধন প্রক্রিয়া চালানোর ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে কি না, (২) প্রক্রিয়াটি কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং (৩) সময়সীমা কতটা বাস্তবসম্মত, বিশেষ করে বিহারে নভেম্বর ২০২৫-এ নির্বাচন হওয়ার কথা মাথায় রেখে।

বেঞ্চ জানায়, এত অল্প সময়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দেওয়া নাগরিকদের পক্ষে কতটা সম্ভব, তা নিয়েও তারা সন্দিহান। “এই মুহূর্তে আমাকেও যদি বলা হয় ওই সব নথি দেখাতে, আমি সম্ভবত দেখাতে পারব না,” মন্তব্য করেন বিচারপতি ধুলিয়া।

আদালত এ-ও বিস্ময় প্রকাশ করে যে, ECI-র তালিকায় ভোটার কার্ড এবং আধার নেই, অথচ অধিকাংশ নথি আধারনির্ভর। এমনকি ভোটার কার্ড নিজেই নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিচয়পত্র।

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছেন, তালিকা সম্পূর্ণ নয় এবং খসড়া তালিকা প্রকাশেও দেরি করা হবে। তবে আদালত খসড়া তালিকাও আপাতত প্রকাশ না করার পরামর্শ দেয়।

এদিকে মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা— কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল, এনসিপি-শরদ পওয়ারের সুপ্রিয়া সুচে, সিপিআই-এর ডি রাজা, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টির হরিন্দর মালিক, শিবসেনা ইউবিটির অরবিন্দ সাওয়ান্ত, সিপিআই-এমএল-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব।

তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ৮ কোটি ভোটারের মধ্যে ৪ কোটির তথ্য যাচাই করা অসম্ভব এবং এই প্রক্রিয়া মুসলিম, দলিত ও দরিদ্র অভিবাসীদের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। প্রয়োজন পড়ছে পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্র বা স্থায়ী বাসস্থান শংসাপত্রের মতো নথি, যা অনেকের কাছেই নেই।

একাধিক আবেদনকারীর বক্তব্য, ২০০৩ সালে ভোটার তালিকা ডিজিটাল হওয়ার পর এই বিশেষ তৎপরতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার তা শুরু করা সংবিধান এবং নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version