ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া ৭৩টি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ কেন্দ্র সরকারকে একাধিক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের নতুন গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কেন্দ্রকে সাফ জানায়, “আপনারা কি মুসলিমদের হিন্দু এনডাওমেন্ট বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করবেন? তাহলে সেটা প্রকাশ্যে বলুন।”
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ছাড়াও বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথন। তাঁরা এই আইনের বিভিন্ন বিতর্কিত দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’—যার মাধ্যমে কোনও জমি বহুদিন ধরে ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহৃত হলে সেটিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে মানা হয়—এই ধারার কার্যকারিতা এবং বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত।
জানা যায়, দেশের প্রায় ৮ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে ৪ লক্ষই ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’-এর অন্তর্গত। এই প্রেক্ষিতে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “হাজার হাজার বছর আগে যদি কোনও ওয়াকফ তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এখন দলিল চাওয়া বাস্তবসম্মত নয়।” তিনি আরও জানান, নতুন আইনে কালেক্টরকে যে বিচারকের ভূমিকা দেওয়া হয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে ঠিক নয়।
প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জানান, তাঁরা গোটা আইন নয়, কিছু নির্দিষ্ট ধারা স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছেন। আদালতও জানায়, “সব ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ ভুল নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে অপব্যবহার হয়েছে—তা-ও অস্বীকার করা যায় না।”
সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সরকারের পক্ষে বলেন, আইনটি বিশদ আলোচনার পর সংসদে পাশ হয়েছে। তবে বেঞ্চ তাঁকে স্পষ্টভাবে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ প্রসঙ্গে জবাব দিতে বলে। আদালত জানায়, বহু প্রাচীন মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানের কোনও প্রামাণ্য নথি পাওয়া সম্ভব নয়, অথচ তারা ওয়াকফ সম্পত্তি বলেই পরিচিত।
অবশেষে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, “আপনারা কি হিন্দু এনডাওমেন্ট বোর্ডে মুসলিমদের রাখবেন? তাহলে সেটা সরাসরি বলুন।” এই মন্তব্য ঘিরে আদালতে সাড়া পড়ে যায়।
শুনানিতে হিংসার প্রসঙ্গও উঠে আসে। আদালত জানায়, আইন নিয়ে হিংসাত্মক ঘটনার খবর অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কপিল সিব্বল বলেন, কে এই সহিংসতা ছড়াচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিচারপতিরা বলেন, আইনের ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরা উচিত।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামীকাল।