খনিজ পদার্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কর নির্ধারণের সাংবিধানিক অধিকার রাজ্যগুলির রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন নয়জন বিচারপতির বেঞ্চ ১৯৮৯ সালের শীর্ষ আদালতের রায় খারিজ করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। বেঞ্চের মতে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির আইনসভা এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শীর্ষ আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, রয়্যালটির সঙ্গে করের কোনও সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে স্বত্ব থেকে আয়ের (রয়্যালটি) যে অংশ দেয়, তা কর বলে বিবেচনা করা যেতে পারে না। রাজ্যগুলির তাদের ভৌগোলিক পরিসীমার মধ্যে উত্তোলিত খনিজ পদার্থের উপর স্বত্বধিকার রয়েছে। তাই তারা করের হার স্থির করার অধিকারী। ন’জন বিচারপতির মধ্যে আট জনই এই রায়ের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। একমাত্র বিচারপতি বিভি নাগারত্ন ভিন্নমত প্রকাশ করেন।
এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং খনি সংস্থাগুলি রাজ্যগুলিকে খনিজগুলির উপর রয়্যালটি বা করের হার স্থির করার ক্ষমতা দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, প্রধান খনিজগুলি বিভিন্ন রাজ্যে অসম বন্টিত রয়েছে। কিছু রাজ্যে কয়লা, আকরিক লোহা, বক্সাইট এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সম্পদ বেশি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খনিজ সমৃদ্ধ রাজ্যগুলি খনিজগুলির উপর ভারী কর আরোপ করে তাদের দাম বাড়াতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ড-সহ কয়েকটি রাজ্য খনিজের উপর কর নির্ধারণ এবং রয়্যালটি বণ্টনের ক্ষেত্রে অসাম্যের অভিযোগ তুলেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। তাদের যুক্তি ছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও খনিজ সমৃদ্ধ অনেকগুলি রাজ্যই উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। সেখানকার মানুষ দরিদ্র। শীর্ষ আদালত সেই দাবি মেনে জানিয়েছে, যে রাজ্যের জমির উপর খনি, তার মালিক কার্যত তারাই। সংবিধানের দ্বিতীয় তালিকার ৫০ নম্বর এন্ট্রি অনুযায়ী খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত কোনও সিদ্ধান্ত সংসদের নেই বলেও জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এই রায়ের ফলে রাজ্যগুলি খনিজ পদার্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কর নির্ধারণে আরও ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং তাদের নিজস্ব আয় বাড়াতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং তাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতায় সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ৪ জেলায় কার্ফু শিথিল হলেও গ্রেফতারি অব্যাহত, মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়াল