নয়াদিল্লি: কিশোরীর বুকে হাত দেওয়া বা পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করলেও তা ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা বলা যায় না— ইলাহাবাদ হাই কোর্টের এই বিতর্কিত রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বি.আর. গবই ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ওই রায়ে “সম্পূর্ণ ভাবে সংবেদনশীলতার অভাব” রয়েছে। কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে জবাবও তলব করেছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়ে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে। এটি তাৎক্ষণিক রায় নয়, চার মাস পর প্রকাশিত হয়েছে। এই রায় নারী সুরক্ষার মৌলিক নীতির পরিপন্থী। আমরা আপাতত ওই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছি।”
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া জরুরি। এই রায় তার মধ্যে পড়ে।’’ বিচারপতি গবই আরও বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বিচারপতি পুরোপুরি অসংবেদনশীলভাবে বিষয়টি দেখেছেন। বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয়।’’
কী ঘটেছিল?
১১ বছরের এক কিশোরীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে পবন ও আকাশ নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁরা নির্জন কালভার্টে কিশোরীর বুকে হাত দেন এবং তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি রামমনোহর নারায়ণ মিশ্রর বেঞ্চ জানায়, ‘‘এটি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয়।’’
বিচারপতি মিশ্র বলেন, ‘‘ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনতে হলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ করতে হবে যে ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল। অপরাধের প্রস্তুতি ও প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’’
‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ সংগঠনের আইনি লড়াই
ইলাহাবাদ হাই কোর্টের এই রায় নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়। ‘উই দ্য উইমেন অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। নির্যাতিতার মাও পৃথকভাবে রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন, যা পরে মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিচার ব্যবস্থার সংবেদনশীলতা বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই স্থগিতাদেশ ভবিষ্যতে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত মামলায় বিচারপ্রক্রিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করবে।