সোমবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হচ্ছে নতুন তিন অপরাধমূলক আইন। এর আগের দিন, রবিবার, এই তিন আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে এই আইনগুলিকে ‘নির্মম এবং অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
মোদী সরকারের এই তিন আইন নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। সংসদে বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা শুরু হয়। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি বিরোধী দলগুলি। সংসদের ভিতরে ও বাইরে উভয় স্থানে এই আইনগুলি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। রবিবার, তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, এর আগে প্রস্তাবিত তিন আইনের বিভিন্ন অংশে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি এবং দলের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। কংগ্রেসের তরফে আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। ডিএমকে দলের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছিলেন এনআর এলানগো এবং দয়ানিধি মারান। ডেরেক ও’ব্রায়েন স্মরণ করিয়ে দেন যে বিরোধীরা সংসদীয় কমিটিতেও এই তিন আইনের বিরোধিতা করেছিল।
১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-র পরিবর্তে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি)-র পরিবর্তে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর পরিবর্তে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’। নতুন আইনে কী অপরাধ এবং তার শাস্তি কী তা নিয়ে ধন্দে আছেন অনেকেই। জানা গেছে, ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩টি অপরাধের জন্য বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
গত ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। তারপর বিরোধীরা এই আইনগুলির বিরোধিতায় সরব হয়। তিন আইন এখনই তড়িঘড়ি বলবৎ না করে পুনর্বিবেচনার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধীদের আপত্তি মূলত দেশদ্রোহিতা সংক্রান্ত বিধি নিয়ে। আইপিসি-র ১২৪(ক) ধারায় ‘দেশদ্রোহিতা’ নামে যে অপরাধটি ছিল, তা এই ন্যায় সংহিতায় ১৫২ ধারায় রয়েছে। তবে শব্দটি বাদ দিয়ে দেশের ‘সার্বভৌমত্ব ও ঐক্য’র কোনও ধরনের বিরোধিতার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা মনে করছে, দেশের নাগরিক এত গভীরে বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা বিরোধিতা করলে নাগরিকের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ করা হতে পারে। অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনে যে নতুন ধারাগুলি যুক্ত হয়েছে, সেগুলিতেও সরাসরি নাগরিকের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের।