নয়াদিল্লি: হাউস অফ কমন্স-এ বিবিসি-র পাশে দাঁড়াল ব্রিটেনের সরকার। বিবিসি-র ভারতের অফিসে আয়কর দফতরের ‘সমীক্ষা’ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে প্রশ্ন উঠলে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রচারমাধ্যমকে সমর্থন করা হয়।
‘দ্য হিন্দু’র সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটেন সরকারের ফরেন, কমনয়েলথ ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) পার্লামেন্টারি আন্ডারসেক্রেটারি অফ স্টেট রক্ষণশীল দলের এমপি ডেভিড রাউটলে প্রায় ২০ মিনিট ধরে বিরোধীপক্ষের এবং তাঁর দলের বিভিন্ন সদস্যের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিবিসি-র পাশে আছি, বিবিসি-র তহবিলে অর্থসাহায্য করি, আমরা মনে করি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রচারমাধ্যমের সম্পাদকীয় স্বাধীনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে সবাই জানে বিবিসি দুই পার্টিরই সমালোচনা করে।
“যে স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা বিশ্বাস করি, সেই স্বাধীনতা বিবিসি-র আছে এবং স্বাধীনতাই হল চাবিকাঠি। বিশ্ব জুড়ে আমাদের যাঁরা বন্ধু আছেন, যাঁরা অনুগামী আছেন, এমনকি ভারত সরকারকেও এর গুরুত্ব বোঝানোর ব্যাপারে সমর্থ হতে চাই”, বলেন ডেভিড রাউটলে।
ভারতে যা ঘটেছে সে ব্যাপারে বহু এমপি ব্রিটেন সরকারকে প্রশ্ন করেন। রাউটলে সুনির্দিষ্ট ভাবে না বলে এটুকু বলেন যে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় এই বিষয়টিও তোলা হয়েছে।
ডকুমেন্টারি বিতর্ক
২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তৈরি হয় বিবিসি-র তথ্যচিত্র ‘দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’। ওই সময় মোদী ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। মোদীর জমানায় গোধরা-কাণ্ড এবং তার পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে এক ঘণ্টার ওই তথ্যচিত্রে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছোয় যে ওই তথ্যচিত্র নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অন্য দেশের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে’ বলে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
গত ২০ জানুয়ারি ইউটিউব এবং টুইটারে ডকুমেন্টারি শেয়ার করার লিঙ্কগুলি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করছে” ওই তথ্যচিত্র।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক, বিবিসি ডকুমেন্টারি সিরিজটিকে ‘প্রোপাগান্ডার অংশ’ বলে সমালোচনা করে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, এই তথ্যচিত্রটি বস্তুনিষ্ঠ নয় এবং এর মধ্যে ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন রয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিবিসি-র তৈরি এই দুই এপিসোডের ডকুমেন্টারি সিরিজ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিবিসি-র ভারতের অফিসে আয়কর দফতর ‘সমীক্ষা’ চালায়। এই ‘সমীক্ষা’ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। আয়কর কর্মীরা ২০১২ সাল থেকে বিবিসির সমস্ত লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখেন। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, বিবৃতি দিতে হয় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে। পালটা তোপ দাগে বিরোধীরাও।
আরও পড়ুন
‘গুন্ডারা হেরে গেছে’, শেলি ওবেরয় দিল্লির মেয়র নির্বাচিত হতেই আপ-এর শব্দবাণে বিদ্ধ বিজেপি
সহায়হীন শৈশবের স্বপ্ন, ইচ্ছা আর আত্মবিশ্বাস বিকাশে ‘প্রজেক্ট উন্নতি’