নয়াদিল্লি: ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ এবং উপহারের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে সরব কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। এই ঘটনায় মহুয়ার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে তাঁর নিজের দল। উল্টো দিকে, মহুয়ার বিরুদ্ধে এখনও কেন দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েই আক্রমণ শানাচ্ছে গেরুয়া শিবির।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ নিয়ে দল কোনো মন্তব্য করবে না। এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক দলের প্রশ্ন, তৃণমূলের নীরবতা মানে কি কৃষ্ণনগর সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ স্বীকার করা নেওয়া হচ্ছে অথবা “কিছু আড়াল করার” চেষ্টার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে নগদ ২ কোটি টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠিও লিখেছেন। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নেওয়ার পাশাপাশি এবং নিজের সংসদ লগইন আইডি শেয়ার করার অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন বিজেপি সাংসদ। আবার আইনজীবী অনন্ত দেহাদরি মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। মহুয়া এবং হিরানন্দানির মধ্যে ঘুষের আদান-প্রদানের ‘অকাট্য’ প্রমাণ হিসেবে দেহাদরির চিঠিটি তুলে ধরেছেন বিজেপি সাংসদ। এমন সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
অন্য দিকে, সম্প্রতি দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “মহুয়ার ঘটনায় তৃণমূল কোনো মন্তব্য করবে না”। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে দলকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার পথই নিচ্ছে তৃণমূল। এ বার সেটাই স্পষ্ট করলেন কুণাল।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, তৃণমূলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। দুর্গাপুজোর উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি গত কয়েকদিন ধরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলছেন, কিন্তু মহুয়া সম্পর্কে একবারও মন্তব্য করেননি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মহুয়াকে নিয়ে তাঁর দলের এই অবস্থানকেই হাতিয়ার করছে বিজেপি। জোরালো প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনওয়ালা এক্স-এ একটি পোস্টে জানতে চেয়েছেন, “মহুয়া মৈত্রের বিষয়ে তৃণমূলের অবস্থান হল ‘আমরা মন্তব্য করব না। সাংসদ নিজেকে রক্ষা করবেন’। এর মানে কী: ১) তৃণমূল স্বীকার করে নিচ্ছে, মহুয়া মৈত্র বিদেশ থেকে তাঁকে পরিচালনা করার জন্য ব্যবসায়ীকে লগ-ইন আইডি দিয়ে গুরুতর নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন? ২) যদি তাই হয়, তা হলে কেন তৃণমূল তাঁকে বরখাস্ত করার পরিবর্তে এখনও ধরে রাখছে?”
একই সঙ্গে বিজেপি মুখপাত্রের প্রশ্ন, “৩) তৃণমূল কি তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছে? কিছু আড়়াল করার চেষ্টা চলছে? তা হলে দলের কেউ এগুলো জানতেন এবং তাঁকে সমর্থন করতেন?” তৃণমূলকে এই সব প্রশ্নের জবাব খোলসা করার দাবিও জানিয়েছেন বিজেপি মুখপাত্র।
আরও পড়ুন: মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে এ বার লোকপালে চিঠি বিজেপি সাংসদ দুবের