Homeখবরআসছে ‘এল নিনো’, বর্ষার অশুভ ইঙ্গিত?

আসছে ‘এল নিনো’, বর্ষার অশুভ ইঙ্গিত?

প্রকাশিত

শ্রয়ণ সেন

এটা আর নতুন কোনো কথা নয় যে ২০২৩ ‘এল নিনো’ বছর হতে চলেছে। এত দিনে অনেকে হয়তো সেটা জেনেও গিয়েছেন। ‘এল নিনো’ বছরে আমাদের দেশে বর্ষা দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেটাও অনেকেই জানেন।

গরমকাল, মোখা, কালবৈশাখীর চক্করে ‘এল নিনো’র ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে এ বার কিছু বলা দরকার। একটু ধৈর্য ধরে পড়বেন সবাই। 

এল নিনো কী

প্রথমে ব্যাখ্যা করা যাক এল নিনো কী। ‘এল নিনো’ একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার পোশাকি মানে হল ‘ছোটো ছেলে।’ কোনো কোনো বছরে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে পেরু-একুয়াদোর উপকূল বরাবর দক্ষিণমুখী উষ্ণ সমুদ্রস্রোত দেখা যায়। এরই পোশাকি নাম ‘এল নিনো’।

ভারতে বর্ষা তথা মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে এই ‘এল নিনো’র গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে যে সাধারণ ভাবে বর্ষা কী করে হয়।

বর্ষা কী করে হয়

** সাধারণ ভাবে পেরু-একুয়াদোর উপকূল তথা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে বায়ুর উচ্চ চাপ থাকে, কারণ সেখানে জল ঠান্ডা। তুলনায় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে জল গরম থাকে। এর ফলে সেখানে বায়ুর চাপ অনেক কম থাকে।

** আবার ভারত মহাসাগরের জল পার্শ্ববর্তী মহাসাগরগুলির থেকে অনেক বেশি গরম থাকে। তাই তুলনামূলক ভাবে বায়ুর চাপ আরও কম থাকে এই অঞ্চলে। ফলে স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই আর্দ্র বাতাস উচ্চ চাপের পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর থেকে নিম্ন চাপের ভারত মহাসাগরের দিকে ছুটে যায়।

** আবার ভারত মহাসাগরের তুলনায় ভারতের স্থলভাগের উপর বায়ুর চাপ আরও কম থাকে। আর তাই আর্দ্রতা-ভরা বাতাস মৌসুমি বায়ুর রূপ নিয়ে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে ছুটে যায়। বৃষ্টি হয়।

এল নিনো এলে কী হয়

স্বাভাবিক বছরে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে যা ঘটে, এল নিনোর বছরে ঠিক তার উলটো ঘটে। এল নিনোর বছরে পেরু-একুয়াদোর উপকূলে সমুদ্রের জল ঠান্ডা থাকার বদলে গরম হয়ে যায়। তখন সেখানে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। অন্য দিকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে জল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয়।

এই একই সময়ে জল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে ভারত মহাসাগরেও উচ্চ চাপ তৈরি হয়। ফলে এল নিনোর বছরে ভারতে মৌসুমি বায়ু সে ভাবে বৃষ্টি দিতে পারে না। বর্ষায় ঘাটতি দেখা যায়।

‘ইন্ডিয়ান ওশন ডাইপোল’

এই শতকে ভারতে খরার মতো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল ২০০২, ২০০৯ এবং ২০১৫ সালে। এই তিন বছরই ‘এল নিনো’ ছিল। আবার ২০১৯ ‘এল নিনো’ বছর হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বর্ষায় বিশেষ প্রভাব পড়েনি। এর পেছনেও একটা কারণ আছে।

‘এল নিনো’ মানেই যে বর্ষার দফারফা, এমনটা সব সময় হয় না। বরং ‘এল নিনো’র বছরেও বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক থাকতে পারে যদি ভারত মহাসাগর আমাদের সঙ্গ দেয়।

এর পেছনে রয়েছে পজিটিভ ইন্ডিয়ান ওশন ডাইপোল (IOD)। আইওডি যদি পজিটিভ থাকে তা হলে ভারত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের জলতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। এ রকম পরিস্থিতি ভারতে বর্ষার জন্য ভালো। জলীয় বাষ্পের জোগান বেড়ে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

‘এল নিনো’ আর ‘আইওডি’ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই ‘এল নিনো’ বছরে ‘আইওডি’ পজিটিভ থাকতেই পারে, যেটা এ বছরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ঠিক সেই পূর্বাভাসকে ভিত্তি করেই আমাদের দেশে এ বার বর্ষা স্বাভাবিকই থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় মৌসম ভবন।

পশ্চিমবঙ্গে কেমন থাকবে বর্ষা

এই ব্যাপারে দুই ধরনের মতামত সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা এ বার স্বাভাবিকের থেকে বেশ কিছুটা কম হবে। অন্য দিকে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা স্কাইমেট জানিয়েছে, এ বার গোটা পশ্চিমবঙ্গেই বর্ষা থাকবে স্বাভাবিক।

আমি আবহাওয়াবিদ বা আবহাওয়া-বিশেষজ্ঞ কিছুই নই। তাই চার মাসের বর্ষা কেমন যাবে, তার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, অতীতের ‘এল নিনো’ বছরগুলোতে বর্ষা আমাদের রাজ্যে খুব একটা অস্বাভাবিক আচরণ করেনি।

প্রথমে ২০০৯-এর কথা ধরা যাক। সে বছর জুন মাসে সে রকম বৃষ্টি হয়নি পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু পরের তিন মাসে এতটাই বৃষ্টি হয় যে গোটা মরশুমে বৃষ্টির কোনো ঘাটতিই ছিল না। একই ঘটনা ঘটে ২০১৯-এও। সে বছর জুলাইয়ের ২৫ তারিখের পর বর্ষা গতিপ্রাপ্ত হয় আমাদের রাজ্যে। অন্য দিকে, আর-এক এল নিনো বছর ২০১৫ সালে তো ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল রাজ্যে।

ফলে এটা বোঝাই যাচ্ছে ‘এল নিনো’র বছরেও বর্ষার চার মাস পশ্চিমবঙ্গ স্বাভাবিক বৃষ্টি পেতেই পারে।

বর্ষার আগমন

তবে এ বছর শুরুতে বর্ষা কিছুটা ধাক্কা খাবে সেটা নিশ্চিত। কারণে কেরলে স্বাভাবিক নিয়মে বর্ষা প্রবেশের তারিখ ১ জুন। এ বছর বর্ষা ৪ থেকে ৭ জুনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

৩৬ হাজার নয়, বাতিল হওয়া চাকরির সংখ্যা সংশোধন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

সুদীপের ৯৮ ও সুমন্তের অপরাজিত ৮২ রানের দৌলতে রনজিতে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল বাংলা

রনজি ট্রফিতে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল বাংলা। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ৯৮ ও সুমন্ত গুপ্তের অপরাজিত ৮২ রানের দৌলতে প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে লিড। শুক্রবার লিড আরও বাড়ানোর লক্ষ্য বাংলার।

বিশ্বের অন্যতম দুর্বল পেনশন ব্যবস্থার তালিকায় ভারত, মার্সার রিপোর্টে উদ্বেগজনক তথ্য

মার্সার সিএফএ ইনস্টিটিউট গ্লোবাল পেনশন ইনডেক্স ২০২৫-এ বিশ্বের অন্যতম দুর্বল পেনশন ব্যবস্থার তালিকায় স্থান পেল ভারত। দেশটির রেটিং ‘Grade D’, যেখানে পেনশন কাঠামোয় বড় ঘাটতি নির্দেশ করেছে রিপোর্ট।

‘জিরো ক্যালরি’ ঠান্ডা পানীয় কি সত্যিই নিরাপদ? নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য, বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি

‘জিরো ক্যালরি’ ঠান্ডা পানীয় খেলে ক্ষতি হয় না— এমন ধারণা ভ্রান্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম শর্করা দেওয়া পানীয় ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি ৫০–৬০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

বর্ষার বিদায় নিলেও সপ্তাহান্তে ফের ভোল বদলাতে পারে আবহাওয়া

বঙ্গ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় নিল বর্ষা। শুরু শীতের অপেক্ষা। তবে সপ্তাহান্তে ফের পরিবর্তন আসতে পারে আবহাওয়ায়, বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে ছয় জেলায়।

আরও পড়ুন

ভারতের ৩ কফ সিরাপে মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক, সতর্ক করল WHO

মধ্যপ্রদেশে শিশুদের মৃত্যুর পর তদন্তে নেমে ভারতের তিনটি কফ সিরাপে মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক শনাক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। তামিলনাড়ুর সংস্থা ‘স্রেসন ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর ‘কোল্ডরিফ’ কফ সিরাপ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

সমালোচনার মুখে পড়ে দ্বিতীয় প্রেস কনফারেন্সে নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ আফগান বিদেশমন্ত্রীর

ভারতে নারী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করায় বিতর্কে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তীব্র সমালোচনার পর রবিবার আবার আয়োজন করেন অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংবাদিক বৈঠকের। কেন্দ্র জানাল, তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না ওই অনুষ্ঠানে।

অনলাইনে অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিয়ো প্রকাশ বন্ধে কেন্দ্রের নতুন নির্দেশিকা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুছে ফেলতে হবে কনটেন্ট

অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিয়ো অনলাইনে প্রকাশ রুখতে কেন্দ্রের নতুন এসওপি জারি। অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কনটেন্ট সরাতে হবে। হেল্পলাইন ও আইনি সহায়তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।