সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সন্তানদেরও এবার ভালো পরিবারের সদস্যরা দত্তক নিতে পারবেন। কলকাতা আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (লিগ্যাল এইড) এবং কলকাতা জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লুসি) এই বিষয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। শহরের দুটি সংশোধনাগারে গিয়ে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেছেন লিগ্যাল এইডের সচিব তথা বিচারক মৌ ঘটক মজুমদার এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া সুর রায়।
সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ৭০ জন পুরুষ এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের ৮০ জন মহিলা বন্দির সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন আধিকারিকরা। তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বন্দিদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লিগ্যাল এইডের তরফে জানানো হয়েছে, বন্দিরা পরিবার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার পর আবারও সংশোধনাগারে আসবেন আধিকারিকরা। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বন্দিদের মতামত নেওয়ার জন্য পুনরায় আলোচনা হবে।
কেন এই উদ্যোগ?
জেল পরিদর্শনের সময় লিগ্যাল এইডের আধিকারিকরা বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দির উদ্বেগ শুনেছিলেন। অনেকেই সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কেউ সন্তানকে মায়ের সঙ্গে জেলে রেখেছেন, কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যার জন্য সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, সন্তানরা কুসঙ্গে পড়ে বিপথে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
লিগ্যাল এইডের এক কর্তা জানান, ‘‘একমাত্র আয়ের মানুষ অপরাধে জড়িয়ে গেলে পুরো পরিবার সমস্যায় পড়ে। সন্তানরা ঠিকমতো মানুষ হতে পারে না, সমাজের লাঞ্ছনা এবং অবহেলা সহ্য করতে হয়। তাই সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সন্তানদের যদি ভালো পরিবেশে মানুষ করার সুযোগ দেওয়া যায়, তা সমাজেরই মঙ্গল।’’
প্রথম প্রতিক্রিয়া
এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন বন্দির সঙ্গে কথা বলেছেন লিগ্যাল এইড এবং সিডব্লুসি-র আধিকারিকরা। যদিও অনেকেই সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। তবে কর্তৃপক্ষের আশা, কিছু বন্দি যদি ইতিবাচক সাড়া দেন, সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাঁরা সন্তানের দত্তকের জন্য সম্মতি দেবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিশুদের ভালো পরিবারে বড় করার ব্যবস্থা করা হবে। তবে বন্দিরা রাজি না হলে এই প্রক্রিয়া এগোবে না।
লিগ্যাল এইডের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমে কয়েকজন রাজি হলেই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে পারে।’’