প্রবল বৃষ্টি ও ধসের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে দার্জিলিং। সোমবার সকাল থেকেই পাহাড়ে আর নতুন করে বৃষ্টি হয়নি, দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘারও। প্রশাসন ও স্থানীয়দের তৎপরতায় বেশ কিছু রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে, পর্যটকরাও ধীরে ধীরে সমতলে নামছেন।
খুলেছে হিল কার্ট ও পাঙ্খাবাড়ি রোড
দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি নামার প্রধান দুটি রাস্তা — হিল কার্ট রোড ও পাঙ্খাবাড়ি রোড — সোমবার থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে। এই রাস্তাগুলির মেরামতির কাজ রবিবার রাতভর চলেছে।
- হিল কার্ট রোড তিনধারিয়া হয়ে সুকনা ও শিলিগুড়ির সঙ্গে যুক্ত।
- পাঙ্খাবাড়ি রোড তুলনামূলক খাড়া ও দুর্গম হলেও এখন চলাচলযোগ্য।
দার্জিলিঙের বিজনবাড়ি ব্লকে আটকে পড়া পর্যটকদের এই দুই রাস্তা দিয়েই নিরাপদে সমতলে নামানো হয়েছে।
সেবক–রংপো রুটে ভারী যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (NHAI) জানিয়েছে, সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত ভারী পণ্যবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।
এই নিয়ম কার্যকর থাকবে:
- মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত,
- এবং বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী চার সপ্তাহ পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারে।
দুধিয়ায় সেতু ভাঙায় মিরিক রোড বন্ধ, সেনার উদ্যোগে বেলি ব্রিজের পরিকল্পনা
দুধিয়ায় সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে মিরিকগামী রাস্তাটি আপাতত বন্ধ। সোমবার সকালে সেনা জওয়ানেরা ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি পরিদর্শনে গিয়েছেন।
সূত্রের খবর, প্রয়োজনে সেখানে একটি বেলি ব্রিজ (অস্থায়ী লোহার সেতু) তৈরি করা হবে, যাতে জরুরি যান চলাচল পুনরায় শুরু করা যায়।
তবে বিকল্প হিসেবে সিকিম–কালিম্পং–লাভা–লোলেগাঁও হয়ে শিলিগুড়ির রাস্তা আপাতত খোলা রয়েছে।
জিটিএ-র উদ্যোগে রাস্তাঘাট সংস্কার চলছে জোরকদমে
গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA) জানিয়েছে, মিরিক, বিজনবাড়ি, সুখিয়াপোখরি ও কালিম্পংয়ের একাধিক রাস্তায় মেরামতির কাজ চলছে।
- সুখিয়াপোখরিতে সোনাদা–মুনদা রোড ও মিলিং রোড খুলে দেওয়া হয়েছে।
- গরুবাথান, লাভা এবং লোলেগাঁও ব্লকের ছোট রাস্তাগুলিতে এখনও মেরামতির কাজ বাকি।
জিটিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব রাস্তাই আংশিকভাবে খুলে দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের নজরদারি ও পুলিশের রিপোর্ট
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ সোমবার দুধিয়ার ভাঙা সেতু পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, “দুধিয়ার সেতুর এক প্রান্ত থেকে শিলিগুড়ির দিকে রাস্তায় সমস্যা নেই। তবে সেতু ভাঙায় মিরিকের দিকে আপাতত যাওয়া যাচ্ছে না। কার্শিয়াং থেকে পাঙ্খাবাড়ি ও হিল কার্ট রোড ব্যবহার করে পর্যটক ও স্থানীয়দের নামানো হচ্ছে।”
রোহিণী পয়েন্টে ধস নামার পর সেই রাস্তাটিও বর্তমানে অচল। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
দার্জিলিংয়ে ফিরছে পর্যটনের আশা
আবহাওয়া পরিষ্কার হতেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলেছে দার্জিলিঙে। পর্যটন দফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে, এবং আগামী সপ্তাহেই পাহাড়ে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ধসের ধাক্কা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দার্জিলিং। রাস্তা খুলছে, সেতু মেরামত শুরু, আকাশে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রশাসনের তৎপরতায় পাহাড়বাসীর মনে ফিরছে আশার আলো — দার্জিলিং আবারও ফিরছে তার মেঘে ঢাকা রূপে।