কলকাতা: সোমবার বিকেলে নবান্ন সভাঘরে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের। এই বৈঠক ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল চরমে। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন এবং অনশনের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বৈঠক দেখা গেল ফেসবুক লাইভ-এও। এ দিন দেখা গেল রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে সভার আলোচনা শুনলেন অনেক সাধারণ মানুষ। এমনকি ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক লাইভ দেখলেন আন্দোলনকারী ও পথচলতি মানুষও।
নতুন করে বলার নয়, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এক সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে। জুনিয়র ডাক্তাররা ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে আমরণ অনশন করছেন। ক্রমেই তাঁদের শরীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হয়ে হয়। বাকিরা এখনও অনশনে অনড়। এই আবহেই জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের ডাক দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মাত্র ৪৫ মিনিটের। বৈঠক শুরু হয় বিকেল ৫টা নাগাদ। কিন্তু আলোচনার জটিলতা এবং নানা বিষয়ের গভীরতাকে কেন্দ্র করে বৈঠক শেষ হতে সময় লাগে আরও বেশি। সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিটে শেষ হয় বৈঠক। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের থেকেও প্রায় দেড় ঘণ্টা বেশি ধরে চলে এই আলোচনা। আর তারই সঙ্গে সাধারণ মানুষের চোখ আটকে থাকে ওই বৈঠকে সরাসরি সম্প্রচারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিনের বৈঠকে তাঁদের সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে শোনেন। তবে, বৈঠকের মূল আলোচনার মধ্যে অন্যতম ইস্যু ছিল অনশন প্রত্যাহার। তিনি জানান, “আমি দিনের পর পর দিন আন্দোলন করেছি। অনশন করেছি। কেউ আসেনি। আমি তোমাদের ভালোবাসি, তাই বারবার কথা বলছি।”
এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের লাইভ দেখার সময় অনেকের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ তাঁদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তবে, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মানুষ তাঁদের মোবাইল ফোনে লাইভ দেখে বুঝতে পেরেছেন যে রাজ্য সরকার এবং আন্দোলনকারী ডাক্তারদের মধ্যে কী ভাবে আলোচনা চলছে এবং সরকার কোন পথে এগোতে চাইছে।
রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভে চোখ রাখা এক যুবক অবশ্য প্রশ্ন তুললেন, “প্রথম বার জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নের দরজায় গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল এই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জটিলতায়। তখন সরকার বলেছিল, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে না। এখন তা হলে কী করে করা গেল?”
ধর্মতলায় অনশনমঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে এক প্রৌঢ় বললেন, “সবই তো দেখলাম, শুনলাম। একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু সমাধান হবে কবে? উভয় তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।”
এক চা দোকানি লাইভ শেষে বলেন,”সব দিক ভেবে ডাক্তারদের অনশন তুলে নেওয়া উচিত। তবে সরকারেরও উচিত জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া”।