ভিন্রাজ্যে কর্মসূত্রে যাওয়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘিরে নতুন আতঙ্ক। অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করছে স্থানীয় পুলিশ। আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, এমনকি প্যান কার্ড দেখিয়েও মিলছে না মুক্তি!
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মুক্তির একমাত্র রাস্তা হয়ে উঠছে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ (PCC)। সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদে ইতিমধ্যেই পিসিসি-র চাহিদা তুঙ্গে। জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যার অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিকদের তরফে। প্রতিদিন গড়ে ১০০-২০০টি আবেদন জমা পড়ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিংহ।
তিনি বলেন, “ভিন্রাজ্য থেকে অন্তত ১০০ জন শ্রমিককে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সকলকেই পিসিসি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রাজ্য পুলিশ একটি হেল্পলাইন নম্বর (৯১৪৭৭২৭৬৬৬) চালু করেছে, যেখানে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা সাহায্য চাইতে পারেন।
কী এই পিসিসি?
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (PCC) হল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রাপ্ত একটি নিরাপত্তা-সম্পর্কিত নথি। এতে উল্লেখ থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড আছে কি না। সাধারণত বিদেশে কাজ, পাসপোর্ট তৈরির সময় কিংবা সরকারি চাকরিতে এটি বাধ্যতামূলক।
কীভাবে মিলবে এই ছাড়পত্র?
জেলা পুলিশের নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
- প্রথমে মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন
- OTP ভেরিফিকেশনের পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু
- আধার ভেরিফিকেশন, জন্মতারিখ, ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়
- প্রয়োজনীয় নথি আপলোডের পর আবেদন খতিয়ে দেখে পুলিশ রেকর্ড যাচাই করে
নথি খতিয়ে দেখে এবং কোনও অভিযোগ না থাকলে অনলাইনে দেওয়া হয় পিসিসি।
কী ঘটছে বাস্তবে
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার আইজুদ্দিন মণ্ডল জানান, “ছত্তীসগঢ়ের পুলিশ আমাদের বাংলাদেশি বলে তুলে নিয়ে যায়। আধার, ভোটার, প্যান কার্ড দেখিয়েও ছাড়া পাইনি। শেষে থানার মাধ্যমে পিসিসি পাঠানো হলে তবেই মুক্তি মেলে।”জলঙ্গির আরশাদ খান বলেন, “বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাজে যাওয়ার আগে এখন পিসিসি জোগাড় করেই যাচ্ছি, নয়তো আবার ভোগান্তি হবে।”